আন্তর্জাতিক

হত্যাচেষ্টার পরে প্রথম সাক্ষাৎকারে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

নির্বাচনী সমাবেশে হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার পর গণমাধ্যমে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এ সপ্তাহের শেষে যে জাতীয় সম্মেলন রয়েছে, সেই সম্মেলনের বক্তৃতা তিনি নতুন করে লিখছেন।

সেই বক্তব্য অসাধারণ কিছু হতে চলেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকারীর নাম-পরিচয় জানালেও কেন তিনি হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিলেন, তা এখনো জানাতে পারেনি মার্কিন তদন্তকারীরা।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণে স্পষ্ট করেছেন, এই হামলাকে ঘিরে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনও অজানা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এএফবিআইয়ের কর্মকর্তা কেন গ্রে এ ঘটনার পেছনে নিরাপত্তার ব্যর্থতাকে দোষারোপ করছেন।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভাষণে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেনেএবং সেইসাথে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিষ্পত্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামলার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প

ট্রাম্প ওই হামলার পর শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি, তার জাতীয় সম্মেলনের বক্তৃতা সম্পূর্ণ নতুনভাবে লিখবেন। সেখানে জো বাইডেনকে সমালোচনা করার পরিবর্তে ‘ঐক্যের’ বার্তায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান তিনি।

মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামাইনারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি যে বক্তৃতা দেব সেটা বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে। এই বক্তব্য এখনও দেওয়া হয়নি। তবে দিলে, সেটা অসাধারণ বক্তব্যের মধ্যে একটি হতে চলেছে।’

তিনি আরও বলেন, এই বক্তব্যের বেশিরভাগ কথাই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিভিন্ন নীতিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। সত্যি বলতে, এই বক্তৃতা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু হবে। দেশকে এক করার এটাই সুযোগ। আমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

গোলাগুলির সেই মুহূর্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানতাম যে পৃথিবী এই ঘটনা দেখছে। আমি জানতাম যে ইতিহাস এর বিচার করবে, এবং আমি জানতাম যে এই মানুষদের জানাতে হবে যে আমরা ঠিক আছি।’

সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে তিনি সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হবেন।

নির্বাচনে তার রানিং মেট কে হবেন তাও তিনি এই সম্মেলন থেকে ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বন্দুক হামলার ঘটনায় এই সম্মেলন পিছিয়ে শনিবার নেওয়া হলেও ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন, ‘এইমাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি একজন ‘হামলাকারী’ বা সম্ভাব্য আততায়ীর কারণে সম্মেলনের সময়সূচীতে পরিবর্তন করতে পারি না’।

এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, তিনি সোমবার থেকে শুরু হওয়া রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিতে উইসকনসিনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই হামলার জেরে তার নিজের নির্ধারিত প্রচারণামূলক কার্যক্রম স্থগিত করেছেন এবং পিছিয়ে দিয়েছেন। বাইডেন আগামী মঙ্গলবার তার প্রচারাভিযানে ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পেনসিলভানিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ওই সমাবেশে একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

হামলার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলেন এবং এই হত্যা প্রচেষ্টাকে ‘জঘন্য’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

গত শনিবার ট্রাম্পের ওপর ওই হামলার ঘটনায় কোরি কমপেরেটোর নামে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন স্বেচ্ছাসেবক দমকল প্রধান। এছাড়া হামলায় ডেভিড ডাচ (৫৭) এবং জেমস কোপেনহেভার (৭৪) নামে আরও দুজন গুরুতর আহত হন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন সমাবেশে নিহত কোরি কমপেরেটোরকে ‘হিরো’ বা ‘নায়ক’ হিসেবে সম্বোধন করে তার প্রতি প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মূলত নিজ পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে ওই ব্যক্তি নিহত হন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক বক্তব্য প্রচার করছে বলে রিপাবলিকানরা যে অভিযোগ তুলেছে সে বিষয়ে কোনও জবাব দেননি বাইডেন। তবে রাষ্ট্রীয় ভাষণে তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের বিশৃঙ্খলার ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেন এবং সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলার কথাও তুলে ধরেন।

অন্যদিকে ট্রাম্পের ওপর বন্দুকধারীর হামলার ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই এবং সিক্রেট সার্ভিস। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাষণে স্পষ্ট করেছেন, এই হামলাকে ঘিরে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনও অজানা।

এফবিআই এজেন্টরা বলেছে, তারা হামলার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে সে বিষয়ে তদন্ত করছে এবং তাদের বিশ্বাস যে বন্দুকধারী একাই এই হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্পকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বে ছিল সিক্রেট সার্ভিস। এখন এই সিক্রেট সার্ভিসের ওপরেই তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা এবং বিভাগ। এফবিআইয়ের দাবি, এটি বেশ ‘আশ্চর্যজনক’ যে, একজন বন্দুকধারী কিভাবে মঞ্চে তাক করে গুলি চালাতে পারলো, কিন্তু কেউ তাকে আগেই কেন পরাস্থ করলো না।

এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোজেক বলেছেন, বন্দুকধারী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন বলে এখন পর্যন্ত কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে তার হামলার পেছনে স্পষ্ট উদ্দেশ্যও এখনও পাওয়া যায়নি। বিবিসি বাংলা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading