জাতীয়

যা ছিল ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনে?

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে দেশজুড়ে চলছে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও কয়েক দিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে এ আন্দোলন। দিন যতই গড়াচ্ছে, আন্দোলনও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ২০১৮ সালের কোটা বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা।

 

জানা গেছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

 

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

 

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

পরে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

 

কী ছিল কোটি বাতিলে ২০১৮ সালের পরিপত্রে?

 

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ফয়েজ আহম্মদের সই করা প্রজ্ঞাপনে কোটা বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়, সরকার সকল সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ তারিখের স্মারকে উল্লেখিত কোটা পদ্ধতি সংশোধন করিল।

 

সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘ক’ অংশে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং দশম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে।

 

‘খ’ অংশে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হইলো।

 

বিষয়টি নিয়ে পরে জটিলতা দেখা দিলে ২০১৯ সালের ৩০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টিকরণ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উপসচিব দীপংকর বিশ্বাস এতে সই করেন।

 

প্রজ্ঞাপনের দুটি অংশের মধ্যে ‘ক’ অংশে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর তারিখের স্মারক অনুযায়ী প্রথম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হইবে এবং উক্ত পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হইলো মর্মে পরিপত্র জারি করায় কোটা পদ্ধতি বিদ্যমান নেই।

 

‘খ’ অংশে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের জারিকৃত স্মারকের (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্য) কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হইলে অপূর্ণ পদসমূহ জেলার প্রাপ্যতা অনুযায়ী স্ব-স্ব জেলার সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য হইতে মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করিতে হইবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading