কমেছে কোকা-কোলার চাহিদা, বিনিয়োগ দেশে রাখতে শুল্ক-কর কমানোর দাবি
চলতি বছর তুর্কি কোম্পানি কোকা-কোলা আইসেসেক (সিসিআই) ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেডে (সিসিবিবি) অধিগ্রহণ করে। ভবিষ্যতে আরও ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
তুর্কি কোম্পানির বিনিয়োগ ধরে রাখতে ও বেভারেজ শিল্পের বিকাশের জন্য পানীয় বা কোমল পানীয়র ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর কমাতে ও অযৌক্তিক হারে পণ্যটির ওপর রাজস্ব না বসাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
গত ২ জুলাই বিডার পরিচালক জসিম উদ্দিন সই করা চিঠি এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠিটির কপি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, কোকা-কোলার পাশাপাশি স্প্রাইট, ফান্টা ও কিনলে উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে। এ খাতে বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৭২ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ১৪৪ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ২২৫ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে পানীয় খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০.১৯ শতাংশ কম। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিক্রির ওপর ৩ শতাংশ (পূর্বে ০.০৬ শতাংশ) ন্যূনতম কর হার প্রবর্তনের সঙ্গে বিদ্যমান মোট করের হারসহ এই খাতের জন্য মোট স্থানীয় কর বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮.২০ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান কর বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এতে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে।
চিঠিতে বিডা জানায়, বর্তমান নিম্নমুখী ব্যবসায়িক অবস্থা বিবেচনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পূর্বে আরোপিত ন্যূনতম শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ না কমিয়ে বরং সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত হার বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে এই নিয়ে মোট শুল্ক-করের হার প্রায় ৫৩ শতাংশে পৌঁছাবে। অন্যান্য শিল্পের তুলনায় এটি সর্বোচ্চ হবে। বাজেটে প্রস্তাবিত বর্ধিত করের হার এবং শুল্ক বিবেচনা করে সিসিআই পূর্বোক্ত বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে ও ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কোমল পানীয় খাতে বিনিয়োগ সংরক্ষণের জন্য আগামী তিন বছরের জন্য প্রত্যাশিত নতুন কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করে চিঠিতে বলা হয়, এই ধারাবাহিকতায় দেশে আরও বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে এবং দেশকে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এগিয়ে যেতে সরাসরি সাহায্য করবে। গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এক্সিকিউটিভ ডেলিগেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করে। সেখানে পানীয় খাতের ব্যবসার ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে করের হার কমাতে এবং সম্পূরক শুল্ক না বাড়াতে হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
চিঠিতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করা ও সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে প্রণোদনা প্রদান করতে ও অর্থনীতিকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছে বিডা।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে চিঠিতে বলা হয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যূনতম কর এবং সম্পূরক শুরা যৌক্তিক হারে নির্ধারণের ওপর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ নির্ভর করছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুযায়ী ন্যূনতম কর এবং সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে সুবিবেচনা করা প্রয়োজন।
এনবিআরকে চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে দুই অঙ্কের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধ অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া, মসৃণভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এবং আগামী ১৮ বছরের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় স্থান লাভের জন্য বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগকে বহুমুখীকরণের জন্যও বর্তমান সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত বেসরকারি বহুমুখী খাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ জিডিপির ৩ শতাংশ উন্নীতকরণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নিবন্ধন ও সহায়তা, বৈদেশিক শিল্প বিভাগের পরিচালক মু জসিম উদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। তবে, এনবিআর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সাড়া পাইনি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের (কোমল পানীয়) ওপর সম্পূরক শুল্ক ও কর বাড়ায় সরকার। কোমল পানীয় ও আইসক্রিম থেকে চলতি অর্থবছর বাড়তি ২৫০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের।