সারাদেশ

কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মোবাইলের ক্যামেরা

বাড়ি বাড়ি ঘুরে নামীদামি ব্র্যান্ডের নষ্ট মোবাইল ফোন কেনেন ফেরিওয়ালারা। সেই মোবাইল ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কিনে নেন সুজন মন্ডল। এরপর তিনি মোবাইলগুলোর যন্ত্রাংশ আলাদা করে দাঁড়িপাল্লায় মেপে বিক্রি করেন। রাজশাহী নগরীর শিরোইল কলোনীর এক নম্বর গলির মোড়ে মেসার্স সুজন এন্টারপ্রাইজে নামে তার দোকান রয়েছে। 

সরেজমিনে মেসার্স সুজন এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানে দাঁড়িপাল্লায় মেপে মেপে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের মোবাইলের ক্যামেরা বিক্রি করছেন সুজন। স্যামসাং, নোকিয়া, মটোরোলা, সিম্ফোনি, লাভা ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড সব ধরনের মোবাইলের ক্যামেরা কেনাবেচা করা হচ্ছে। এসব মোবাইলের ক্যামেরার দাম প্রতিকেজি ২০ হাজার টাকা। আর প্রতি পিস হিসেব করলে দাম পড়ছে মাত্র ৩ টাকা।

তবে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের তুলনায় বাটন কিম্বা ফিচার ফোনের ক্যামেরার দাম একটু বেশি। শুধু ক্যামেরা নয়, কেজিতে বিক্রি হয় মোবাইলের সার্কিট, ভাইব্রেটর। পিস হিসেবে বিক্রি হয় মোবাইলের ডিসপ্লে, ব্যাটারি। ব্যাটারির তেমন চাহিদা না থাকলেও মোবাইলের সার্কিট, ভাইব্রেটর, ডিসপ্লের ভালো চাহিদা রয়েছে।

জানা গেছে, সুজন মন্ডলের ৩০ থেকে ৩৫ জন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা রয়েছে। বিগত পাঁচ বছর আগেও সুজন মন্ডল ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা ছিলেন। তিনি বর্তমানে তার মেসার্স সুজন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকান রয়েছে।  সেখানে খেলনা ও কসমেটিকস পাইকারি দামে পাওয়া যায়। এছাড়া পুরাতন মোবাইলের মাদারবোর্ড, কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, হার্ড ডিক্স, র‌্যাম ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। খেলনা নিয়ে ফেরিওয়ালারা শহর ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুরোনো মোবাইল ফোন কিনে থাকেন। তারা বাটন কিংবা ফিচার ফোনগুলো ৭০ থেকে ১০০ টাকা দরে কিনে থাকেন। আর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলগুলো কেনা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এরপর তারা মোবাইলগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন সুজন মন্ডলের দোকানে। রাজশাহীতে সুজন মন্ডলের মতো আরও কয়েকজন এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরোনো মোবাইল ফোন কেনেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার বাসিন্দা মানিক হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর বুধপাড়ায় কথা হয় মানিকের সঙ্গে।

মানিক জানান, তার মতো অনেকেই এই কাজ করে থাকেন। তারা মোবাইল ফোন কেনার পাশাপশি নারীদের মাথার চুল কিনে থাকেন। তারা মূলত সব ধরনের নষ্ট মোবাইল কিনে থাকেন। একেকটি নষ্ট অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন তারা কেনেন দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর বাটন কিংবা ফিচার ফোন ৭০ থেকে ১০০ টাকায় কেনেন।

সুজন মন্ডলের দোকানে কথা হয় মোহনপুরের কেশরহাট এলাকার আনারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, নষ্ট মোবাইল তো আর কাজে লাগে না। মানুষ বাড়িতে ফেলে রাখে। অনেকেই বাড়ির আশপাশে ফেলে দেন। মানুষ জেনেছে ব্যবহারের নষ্ট মোবাইল ফোনও বিক্রি হয়। তাই এখন আর মানুষ মোবাইল নষ্ট হলে ফেলে দেয় না। অনেক সময় ভালো মোবাইলও পাওয়া যায়। তবে সেই মোবাইল পূর্বে অনেক বার নষ্ট হয়েছে। তাই অনেকেই আর মেরামত করে না। না করে তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই মোবাইলগুলোর ডিসপ্লেতে আলো থাকে। হালকা কাজও করে। তবে চলে না। নষ্ট হিসেবেই ধরা হয়।

ব্যবসায়ী সুজন মন্ডল বলেন, গড়ে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পরিত্যাক্ত নষ্ট মোবাইল ক্রয় করেন তিনি। এসব মোবাইলের সবই তিনি ফেরিওয়ালা বা ভাঙড়ি বিক্রেতাদের নিকট থেকে কেনেন। এরপর সেই মোবাইলগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পৃথক পৃথক করার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। এই কাজে সুজন ও তার একজন সহযোগী রয়েছে। তারা ইলেকট্রনিক্সের কাজ না জানলেও সার্কিট, ভাইব্রেটর, ডিসপ্লে মোবাইল থেকে খুলে আলাদা করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, মোবাইলের এসব ক্যামেরা, ডিসপ্লেসহ আনুষাঙ্গিক উপকরণগুলো আলাদা আলাদা করে ঢাকায় বিক্রি করেন। ঢাকায় এর মার্কেট ভালো আছে। আমরা এগুলো টাকায় কেনাবেচা করি। কিন্তু সেগুলো ঢাকায় ও চীনে করা হয় রিসাইকেলিং। তবে ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী এসব আনুষাঙ্গিক উপকরণগুলো বিদেশে পাঠান। তখন এসব জিনিসের দাম ডলারে বিক্রি হয়।

অপরদিকে স্থানীয় মোবাইল মেরামতকারীরাও এখান থেকে অনেক সময় তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করেন। মুরাদ হোসেন নামে এক মোবাইল মেরামতকারী বলেন, এখনে খুব বেশি ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায় দামি মোবাইলের কোনো পার্টস নেই। সেই পার্টস অনেক সময় এখানে পাওয়া গেলে মোবাইলটা সচল করা সম্ভব হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading