জেলার খবরসারাদেশ

জিন তাড়ানোর নামে অনৈতিক কাজ, কবিরাজকে গলা কেটে হত্যা

চুয়াডাঙ্গায় স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করার সন্দেহে গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখকে গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩১ মে স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য কবিরাজ রাজাই শেখের কাছে নিয়ে যান রুবেল হোসেন (২৩)।

এ সময় রুবেল হোসেনকে সিগারেট আনতে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন রাজাই শেখ। বিষয়টি জানতে পেরে ওইদিন রাতেই চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ওই কবিরাজের গলাকেটে হত্যা করেন রুবেল। এ ঘটনায় রুবেল হোসেন ও তার চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম- সেবা) তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

নিহত আব্দুর রাজ্জাক সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামের মৃত দেছের আলীর ছেলে। তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি কবিরাজিও করতেন।

গ্রেপ্তার রুবেল মিয়া সুবদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার আব্দুস সেলিমের ছেলে ও সোহেল রানা (২০) একই এলাকার আনিসের ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

এর আগে গত শনিবার (১ জুলাই) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের পুরাতন ভান্ডারদোহা গ্রামের কৃষি জমি থেকে আব্দুর রাজ্জাকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। আটক করা হয় রুবেল হোসেন ও তার সহযোগী সোহেল রানাকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের তারা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল মিয়া জানান, গত ৩১ মে সন্ধ্যার পর শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যান। কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দুজনকেই পার্শ্ববর্তী হোগলডাঙ্গা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর সেতু সংলগ্ন একটি পান বরজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছে আব্দুর রাজ্জাক রুবেলকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে বলেন। কিছুক্ষণ পরে রুবেল ঘটনাস্থলে এসে আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পান। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ৩৫-৪০ মিনিট পর দুজন পানবরজের কাছে ফিরে আসেন।

তিনি আরও জানান, এ সময় কবিরাজ তার স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছেন বলে সন্দেহ হয় রুবেলের। এরপর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী স্বীকার করেন আব্দুর রাজ্জাক তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রুবেল হোসেন। প্রতিশোধ নিতে সেই রাতেই চাচাতো ভাই সোহেল রানার স্ত্রীর জিন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে আব্দুর রাজ্জাককে ডেকে নেন। পরে একটি মোটরসাইকেলযোগে রুবেল ও তার চাচাতো ভাই সোহেল পুরাতন ভান্ডারদহ গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকে নিয়ে যান। সেখানে কবিরাজের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন রুবেল। এরপর আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যান।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত করে ঘটনার পরদিন অভিযুক্ত রুবেল মিয়াকে তার নিজ বাড়ি সুবদিয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপর সহযোগী তারই চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে একই গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading