আন্তর্জাতিক

পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী অভিযান, শিক্ষক-চিকিৎসকসহ নিহত

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষক ও চিকিৎসকের পাশাপাশি দুজন কিশোরও রয়েছেন।

এছাড়া অভিযানে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২১ জন। বুধবার (২২ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। অবশ্য বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭ জন বলে জানানো হয়েছে।

আল জাজিরা বলেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানে আটজন নিহত ও আরও অন্তত ২১ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে থাকা একজন চিকিৎসক বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী এই অভিযানের সময় অন্যদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি শিক্ষক, একজন ডাক্তার এবং ১৫ ও ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোরকে হত্যা করেছে। এমনকি অভিযানের সময় ‘রাস্তায় চলাচলরত যে কোনও ব্যক্তির’ দিকে নির্বিচারে গুলি চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

পৃথক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে একজন চিকিৎসক ও এক কিশোরসহ সাত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অভিযান চালিয়েছে। এতে একজন ডাক্তার এবং একজন কিশোরসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া বড় পরিসরের এই অভিযানে কয়েক ডজন যানবাহনও যুক্ত ছিল।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জেনিন শহরের সশস্ত্র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে অভিযানটি চালানো হয়েছে। এটি হামাস, ফাতাহ এবং ইসলামিক জিহাদ-সহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি দীর্ঘস্থায়ী কেন্দ্র। অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীকে গুলি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

অ্যাম্বুলেন্স চালক হাজিম মাসারওয়া বলেন, ‘গোপন (আন্ডারকভার) বাহিনী হঠাৎ করে ওই এলাকায় অভিযান চালায় এবং তারা রাস্তায় চলাচলরত যে কোনও ব্যক্তির শরীরে গুলি চালায়। তারা চলমান যেকোন কিছুকে টার্গেট করছিল।’

অভিযানের সময় ভারী সাঁজোয়া বুলডোজারগুলোও শহরের কেন্দ্রের কাছে রাস্তায় অবস্থান নেয়। রাত নামার সাথে সাথে মাঝে মাঝে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল এবং শহর সংলগ্ন অন্ধকার শরণার্থী শিবিরে তখনও সামরিক যান চলাচল করছিল। তবে রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ওই শিক্ষক এবং ডাক্তার দুজনেই শহরে কাজ করতে যাচ্ছিলেন। এছাড়া ১৫ বছর বয়সী এবং ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোর-সহ মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহত অন্যান্য ব্যক্তি বা আহতদের পরিচয় সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য বুধবার সকালেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক উইসাম বেকার বলেন, ‘জেনিন হাসপাতালটি জেনিনের প্রধান সরকারি হাসপাতাল এবং এটি এখন ঘিরে রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে সামনে কঠিন সময় আসছে, কারণ দখলদার বাহিনী এখানে আরও সেনা জড়ো করছে।’

তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ সার্জনও রয়েছেন। কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর গত বছরের শুরু থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরও বেড়েছে।

মূলত গাজা ভূখণ্ডের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল অংশ হিসাবে চায়। তবে গত বছর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সেখানে ব্যাপক ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা বা গ্রেপ্তার করেছে তারা।

রয়টার্স বলছে, গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গত সাত মাসে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বেসামরিক নাগরিক।

এছাড়া ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading