সারাদেশ

‘ভাই, আমি কি বাঁচব না, আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে’

তৌফিক তখনো কথা বলছিল। নড়াচড়া করছিল, আমাদের বলছিল, ভাই, আমি কি বাঁচব না। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। শরীরের নিচের অংশ জ্বলে যাচ্ছে। আমাকে বাঁচান ভাই।’

এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন। আজ বুধবার দুপুরে চুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত শোকসভায় রিফাত স্মৃতিচারণা করে এসব কথা বলেন। এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজে যেমন কেঁদেছেন, তেমনি কাঁদিয়েছেন অন্য সহপাঠীদের।

গত সোমবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জিয়ানগর এলাকায় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় নিহত হন পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন। আহত হন একই বর্ষের জাকারিয়ক হিমু। পরে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়। এতে কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন।

দুর্ঘটনার পর শান্ত ও তৌফিককে ক্যাম্পাসের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে সেখানে গিয়ে পৌঁছান শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন ও ফুয়াদ ইকবাল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তৌফিককে নিয়ে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান রিফাত। অন্যদিকে শান্তকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ফুয়াদ ইকবাল।

পথে যেতে যেতে যা কিছু ঘটেছে, তার বিবরণ শোকসভায় তুলে ধরেন দুজন। ফুয়াদ ইকবাল বলেন, ‘পথ যেন শেষ হচ্ছিল না। এ পথে কতবার গেছি। কিন্তু সেদিন মনে হচ্ছিল পথটা অনেক লম্বা। শান্ত ঘটনাস্থলে মারা যাননি। সে নড়াচড়া করছিল। শান্ত বলেছিল, আমার মাকে একটা ফোন দেন ভাই। কিন্তু নম্বর ছিল না আমার কাছে।’

নিহত দুই শিক্ষার্থীর শোকসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন এক সহপাঠী। আজ দুপুরে চুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি : সৌরভ দাশ

ফুয়াদ বলেন, ‘শান্তকে যে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছিল, সেটিতে সাইরেন ছিল না। পুরো রাস্তা চিৎকার দিয়ে যানবাহন সরাতে হয়েছে। শেষে বহদ্দারহাট এলাকায় গিয়ে শান্ত আর নড়াচড়া করছিল না। একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল।’ এসব কথা বলতে গলা জড়িয়ে যায় ফুয়াদের। তারপরও নিজেকে সামলে বলেন, ‘ভাই, তোরা আর আমাদের সঙ্গে নাই, এটা ভাবতেই পারছি না।’

সভায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের অনেকেই বক্তব্য দেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, ঘাতক বাসচালক ওভারটেক করতে গিয়ে দুজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলেন। এই বাস সড়কে চলতে পারবে না। শাহ আমানতের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে।

সাদিয়া ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেদিন মাত্র আধা ঘণ্টা আগে শান্ত সাহার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমরা একসঙ্গে ক্লাসে প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর শুনলাম শান্ত আর নেই। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তাঁর সঙ্গে আর দেখা হবে না, এটা ভাবতেই পারছি না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading