ঝিনাইদহে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারফলসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঁশ ও কাট দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এখানে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে তারা।
কালীগঞ্জের চাপালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ শহীদ মিনারে। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক পেরিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। মহেশপুরের শিবানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গিয়েছে দেড় কিলোমিটার দূরের সস্তাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
শহীদ মিনার না থাকায় এই দুই বিদ্যালয়ের মতো জেলায় বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে কষ্ট করে অনেক দূরে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। শহীদ মিনার না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে শুধু আলোচনা আর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্যে শেষ হবে অমর একুশের অনুষ্ঠান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৯২টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। এগুলোর ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২১৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ২৯টিতে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে আছে ১৫টি, কোটচাদপুর উপজেলায় ৭৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে আছে ৬টি, মহেশপুর উপজেলায় ১৫২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে আছে ১২টি, শৈলকুপায় ১৮১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে আছে ১৩টিতে এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১৩৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৭টিতে। আর এগুলোর বেশির ভাগ নির্মিত হয়েছে ওই সব প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে। সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমজাদ হোসেন।
একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ভাষার জন্য লড়াই করা এবং লড়াইয়ে জীবন দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বে একমাত্র আমাদের দেশেই ঘটেছে। যে কারণে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে পালিত হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের কোমলমতি শিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় দিবসটি ঠিকমতো পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা কেউ নিজেদের চেষ্টায় বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।’
এ বিষয়ে পারফলসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন জানান, ১৯৯০ সালে তাঁদের এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। দুটি ভবন রয়েছে বিদ্যালয়ে, যেখানে কক্ষ আছে ৮টি। বিদ্যালয়ে শতাধিক শিশু পড়ালেখা করে। শিক্ষক আছেন ৫ জন। কিন্তু এখানে শহীদ মিনার নেই। তাদের বিদ্যালয়ের থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে রয়েছে শহীদ মিনার। দূরের শহীদ মিনারে শিশুদের নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। তাই তাঁরা বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মহেশপুর উপজেলার শিবানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব আজম ইকবাল জানান, তাঁদের কষ্ট হলেও পাশের সস্তাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিয়ে গেছেন। শিশুদের নিয়ে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করলে তারা এই দিনটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতেন। যে কারণে তাঁরা প্রতিবছর এটা করে থাকেন।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, সরকারিভাবে তাঁদের নির্দেশনা আছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নেই, সেখানে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার। তাঁরা সেভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন।