বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে গুলিতে মারা যান কৃষক সাইফুল
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ২০ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার আমুয়াকান্দা বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম (৩৭)। সেখানে ব্যাপারীর দোকানের ট্রলি থেকে ধান নামানোর সময় হঠাৎ কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। এ সময় হঠাৎ পুলিশের ছোড়া একটি গুলি সাইফুলের মাথায় লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনার পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান কৃষক সাইফুল।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ঢাকা পোস্টের কাছে এভাবেই কৃষক সাইফুল ইসলাম নিহত হওয়ার বর্ণনা দেন তার ছোট ভাই মো. হাফিজুল ইসলাম।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। কাজকাম করে ভাত খাই। আমরা ভাই মারা যাওয়ার পর মনে দুঃখ নিয়েই মরদেহ দাফন করেছি। কিন্তু মামলা করি নাই। মামলা করে কী হইবো। পুলিশ গুলি করে আমার ভাইরে মারছে। মামলা কার কাছে করব।
হাফিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ধান বিক্রি করে সাইফুল ভাই তার শ্যালক জিয়ারুলের বিয়ের জন্য উপহার এবং নতুন ঘর করার জন্য কিছু মালামাল কিনে বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু ভাই আমার বাড়ি ফিরল গুলিবিদ্ধ লাশ হয়ে। সে আর তার শ্যালকের বিয়েতেও যেতে পারিনি। ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন ঘরও করে যেতে পারেনি।
এদিকে এ ঘটনার তিন দিন (২৩ জুলাই) পর নাতির শোকে নিহত সাইফুল ইসলামের দাদা আফতাব উদ্দিন (৮০) মারা গেছে। এসব কারণে গত এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এই পরিবারটিতে শোকের মাতম চলছে বলেও জানিয়েছেন প্রতিবেশিরা।
জানা যায়, নিহত সাইফুল ইসলাম উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চর ঢাকিরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. তৈয়ব আলীর ছেলে। পরিবারের ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ সন্তান। দাম্পত্য জীবনে তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। এর মধ্যে বড় মেয়ে মিম আক্তার (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে রামিম হাসানের বয়স ৪ বছর। অপর মেয়ে সাইমা আক্তারের বয়স ২ বছর ৪ মাস।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি স্ত্রী রহিমা আক্তারের কাছ থেকে। তিনি স্বামীর মৃত্যু শোকে যেন পাথর হয়ে আছেন। কেউ কোনো কথা বললে বাকরুদ্ধ অবস্থায় চেয়ে থাকেন শুধু অশ্রুসজল চোখে।
সাইফুলের বাবা কৃষক তৈয়ব আলী বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছে। এখন আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা সমান কথা। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
ঘটনার দিন সাইফুলের সঙ্গে ধান বিক্রি করতে যাওয়া আরেক ছোট ভাই শহীদুল ইসলাম বলেন, বাজারের ধান মহালে গাড়ি থেকে ধান নামানোর সময় হঠাৎ একটা গুলি এসে সাইফুল ভাইয়ের চোখের ওপর দিকে লেগে মাথা ছেদ করে বেরিয়ে যায়। এ সময় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পরে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসি।
শহীদুল আরও বলেন, ঘটনার সময় সেখানে শুধু পুলিশ ছিল। পুলিশে গুলি করছে। বিচার কার কাছে দেব আমরা? বিচারের কিছু আছে? পুলিশে গুলি করছে, মামলা কার কাছে দেব?
রহিমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবুল বাশার আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাইফুল ইসলাম ধান বিক্রি করতে বাজারে গিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। ওরা সহজ সরল মানুষ। তাদের বাবা তৈয়ব আলীও অসুস্থ। দাদা আফতাব উদ্দিন নাতির শোকে গত ২৩ জুলাই মারা গেছে। এখন ওরা কান্নাকাটি করেই দিন পার করছে।