সারাদেশ

ফরিদপুরে পুলিশের মামলার আসামি আ. লীগ নেতাসহ তার ছেলে ও ভাই

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কোটা আন্দোলন নিয়ে চলা সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা, তার ছেলে ও ভাইকে। পুলিশ ওই আওয়ামী লীগ নেতাসহ তার ছেলে বা ভাইকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২০ জুলাই ঢাকা-খুলনা মহাসড়েক অবরোধ ও সরকারি কর্তব্যপালনে বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর হামলা করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভাঙ্গার আলগি ইউনিয়নের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর গত ২০ জুলাই রাত ১০টা ২০ মিনিটে ভাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন ভাঙ্গা থানায়।

ওই মামলায় নাম উল্লেখ করা ৪৮ জনের মধ্যে উপজেলার আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার মাতুব্বরবকে (৫৫) এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। দেলোয়ার মাতুব্বর ওই ইউনিয়নের সোয়াদী গ্রামের মৃত ওমর আলী মাতুব্বরের ছেলে। তিনি ২০২১ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে দেলোয়ার মাতুব্বরের ছেলে মেহেদী মাতুব্বরকে (২০) এবং ১৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেলোয়ার মাতুব্বরের ভাই আবুল মাতুব্বরকে (৪৫)।

এসআই কবির হোসেন মোল্লা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তিনি জানতে পারেন কোটা বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ভাঙ্গার সোয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙ্গা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গাসহ আশেপাশের উপজেলা হতে জামায়াত, বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের দুষ্কৃতিকারীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাঁশ ও কাঠের গুড়িতে আগুন দিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ জনগণের যানমালের ও যানবাহনের ক্ষতি সাধান করছে। এ খবর শুনে তিনি পৌনে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান উল্লেক্ষিত আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিরা মহাসড়কের মাঝখানে কাঠের গুড়ি ও বাঁশে অগ্নিসংযোগ করে মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাল, কাতরা, কাঠের লাঠি, বাশের লঠি, ইটের টুকরা, বড় রামদা ইত্যাদতে সজ্জিত হয়ে উশৃঙ্খল ও বেপরোয়া আচরণ করেছে। তিনি (বাদী) হাত মাইক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরে গিয়ে যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। আসামিরা এ অনুরোধ উপেক্ষা করে আরও বেপরোয়া হয়ে তাদের হাতের দেশীয় মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

এজাহারে বলা হয় এ হামলায় তিনিসহ ভাঙ্গা থানার এসআই অমিও মজুমদার এবং কনস্টেবল হানিফ, ফারুক, নাজমুল, সজীব, আহাদুল জখম হন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এ অবস্থায় যানমাল রক্ষা ও মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক রাখার জন্য ৩১টি সীসার গুলি ও ১০টি রাবার গুলি ছুড়ে ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থানার অতিরিক্ত পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

পুলিশের দায়ের করা এ মামলায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা, তার ছেলে ও ভাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে ভাঙ্গা থানার পুলিশ এ পর্যন্ত এ মামলার আসামি হিসেবে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান (৬২), কালামৃধা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিন্টু আকন্দ (৪০) এবং ঢাকা নিউ মার্কেট যুবদলের সভাপতি মো. হারুন মাতুব্বর (৫২)।

আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার মাতুব্বরের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে।

আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কমল চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন,ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডের যে জায়গায় এ ঘটনা ঘটেছিল তার পাশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দোলোয়ারের বাড়ি অবস্থিত। তিনি (দেলোয়ার) গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনা দেখতে বের হতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে ও পুলিশের সঙ্গে আলাপ করা হবে।

ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির শিকার এড়াতে ফরিদপুর জেলার শত শত নেতাকর্মী বর্তমানে ঘর ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও তাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading