সারাদেশ

মেহেরপুরে ভেজাল বীজে ফলন বিপর্যয়ে পড়েছেন শসা চাষিরা

একদিকে অনুন্নত বীজ, অন্যদিকে অবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় মেহেরপুরে ফলন বিপর্যয়ে কপাল পুড়েছে মেহেরপুরের অন্তত শতাধিক কৃষকের। এতে শসা চাষিরা মোটা অংকের টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী দেশি জাতের শসার বীজের পরিবর্তে অন্য জাতের বীজ সরবরাহ করায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তাদের।

কৃষি বিভাগ বলছেন, চাষিরা লিখিত অভিযোগ করলে বীজের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেরেহপুর জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাচা পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন শসা আবাদ করেছেন শত শত কৃষক। শসার গাছ ভালো হলেও গাছের ডগায় শসা হচ্ছে না। গ্রামের বিভিন্ন বীজ ভান্ডার থেকে দেশী জাতের শসা বলে জমিতে চারা রোপন করলেও শসা উৎপাদনের সময় দেখা যাচ্ছে হাইব্রিড শসা ফলছে। এছাড়া ফলনেও বিপর্যয় রয়েছে। শসার ফলন পির্যয়ে আবাদের খরচও উঠবে না বলে হতাশায় দিন যাপন করছেন চাষিরা। এ সময় শসা বিক্রি করে লাভের আশায় ধারদেনা করে আবাদ করেন তারা। আশায় ছিলেন বর্ষাকালে শসার ভালো দাম পাবেন। কিন্তু চাষিদের সে আশায় ভাটা পড়েছে। ভেজাল বীজের কারণে মাচা ভর্তি শসার গাছ । মাচা লতাপাতায় ও ফুলে ভরপুর হলেও তাতে শসা নেই। গেল বছর যে সকল জমিতে প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দুই মণ শসা পাওয়া যেত, সেই জমিতে এ বছর ১৫ থেকে ২০ কেজি শসা পাওয়া যাচ্ছে।

গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের চাষি মিলন হোসেন বলেন, কালিগাংনী মাঠের এক বিঘা জমিতে রকেট জাতের শসা লাগিয়েছি। মেহেরপুর শহরের একটি বীজের দোকান থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। দোকানি দেশী জাতের শসা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ সময় শসা পাওয়ার আশায় ৪ মাস যাবৎ পরিচর্যা করে আসছি। অনেক আগে থেকেই আমাদের শসা গাছে শসা ধরার কথা। কিন্তু শসা হচ্ছে না। আর যা হচ্ছে তা হাইব্রিড জাতের। প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। এমন ফলন হলে লাভ হওয়া দূরের কথা, আমাদের খরচের টাকাই উঠবে না। এক বিঘা জমিতে মাচা তৈরি, জমি প্রস্ততকরণ ও বীজ দিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের ইশাদুল ইসলাম বরেন, লোকনাথ জাতের শসার বীজ কিনেছিলাম গাড়াবাড়িয়া বাজারের সাহারুলের দোকান থেকে। এক বিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি। খরচ শেষে এখন শসা বিক্রির সময়। এখন দেখি গাছে শসা ধরছে না। দু-একটা ধরলেও তা আবার হাইব্রিড জাতের। এ জাতের শসা মেহেরপুরে বিক্রি করা খুবই মুশকিল। কেউ নিতে চায় না। আবার দামও কম।

ওই গ্রামের তাজিম উদ্দীন প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালীন শসার আবাদ করেন। চলতি বছেরে ৩ বিঘা জমিতে শসা আবাদ করেছেন। তার ভাগ্যেও একই দশা। জমিতে গাছ আছে কিন্তু শসা ধরছে না। আমার জামাই মেহেরপুর থেকে বীজ কিনে এনেছিল। তাকে বিশ্বাস করে শসা লাগিয়ে প্রতারিত হলাম। তিন বিঘা জমিতে অন্তত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে থেকে এক থেকে দেড়মণ শসা পাচ্ছি। এদিকে গাছেরও বয়স হয়ে যাচ্ছে। আর হয়তো বেশিদিন শসা হবে না। এবার মোটা টাকা লোকসান গুণতে হবে।

ফসাচাষি মেহেরদি, আকাশ, কালু শেখসহ ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা জানান,অধিক লাভের আশায় গ্রীষ্মকালীন শসা আবাদ করতে রাত দিন পরিশ্রম করেছি। অসময়ে শসা আবাদে ভালো ফলন পেতে খরচও করেছি বাড়তি টাকা। উৎপাদনের সময় দেখি বীজে  ভেজাল,আমরা প্রতারিত হয়েছি। দেশী জাতের শসা এখন হয়ে উঠেছে হাইব্রিড। আবাদে ফলন বিপর্য ঘটছে। আমাদের জেলায় প্রতিবছর যে পরিমাণ শসা উৎপাদন হয় তাতে জেলার মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকা, বরিশাল, সিলেট রাজশাহীসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে রপ্তানি করে মোটা অংকের টাকা লাভ হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর শসার ফলন না থাকায় আমাদের এলাকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, চলতি বছরেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। এতে ১৮০০ টন শসা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরেও চাষিরা শসা আবাদে ভালো ফলন পেয়েছে এবং লাভবান হয়েছে। ভেজাল বীজের বিষয়ে কোনো কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে শসার ফল বিপর্যয় ঘটতে পারে। অনেক গাছে পর্যাপ্ত ফুল হচ্ছে, কিন্তু ফল ঝরে যাচ্ছে বলে শুনেছি। আমারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ অব্যাহত  রেখেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading