আন্তর্জাতিক

পশ্চিমাদের চেয়ে কম বয়সে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন ভারতীয়রা

নিজে ধূমপান না করলেও আশপাশের ধূমপায়ীদের কারণে অনেক সময় ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয় মানুষ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর বাসিন্দাদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ভারতীয়রা।

সম্প্রতি ভারতের বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক-গবেষকরা সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই দাবি করেছেন। ‘ইউনিকনেস অব লাং ক্যানসার ইন সাউথইস্ট এশিয়া’ নামের সেই প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে যারা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাদের ক্যানসার শনাক্ত হয় সাধারণত ৫৪ থেকে ৭০ বছর বয়সে।

অন্যদিকে ভারতীয় যেসব পরোক্ষ ধূমপায়ী ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাদের তা শনাক্ত হয় সাধারণত ৪৪ থেকে ৬০ বছর বয়সে। অর্থাৎ পশ্চিমা দেশের লোকজনের তুলনায় অধূমপায়ী ভারতীয়দের ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত হয় ১০ বছর আগে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতি বছর যত সংখ্যক মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে ফুসফুস ক্যানসারের রোগীরা তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। তবে এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার অন্যান্য ক্যানসার রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২০ সালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ফুসফুস ক্যানসারের রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ১৮ লাখ ৫০ হাজার। তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৬০ হাজার জন পরে মারা গেছেন।

ভারতীয় ফুসফুস ক্যানসার রোগী বিষয়ক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ভারতে গড়ে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৭২ হাজার ৫০০ জনের কিছু বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৬৬ হাজার ২৭৯ জনের।

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ভারতীয় রোগীদের একটি বিশাল অংশ অধূমপায়ী এবং পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। টাটা মেডিকেল সেন্টার মুম্বাই শাখার অঙ্কোলজি (ক্যানসার চিকিৎসা) বিভাগের চিকিৎক এবং এবং ক্যানসারবিশেষজ্ঞ ডা. কুমার প্রভাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এ প্রসেঙ্গ বলেন, ‘প্রতি বছর ফুসফুসে ক্যানসার নিয়ে যেসব রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের প্রায় ৫০ শতাংশই অধূমপায়ী।’

অবশ্য শুধুমাত্র পরোক্ষ ধূমপানের কারণেই ভারতীয় অধূমপায়ীরা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন— ব্যাপারটি এমন নয়। দেশটির বড় শহরগুলোর প্রায় সারা বছর ধরে যে ভয়াবহ বায়ুদূষণ চলে, সেটিও ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম অনুঘটক। বিশেষ করে বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর পরবর্তী বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই, চন্ডিগড়, কলকাতা, বেঙ্গালুরুসহ বড় শহরগুলোর বাতাসে বিপুল পরিমাণ অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২দশমিক ৫) অস্তিত্ব থাকে। এসব বস্তুকণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে ক্যানসারের পরিবেশ তৈরি করে।

এছাড়া এখনও পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় ভারতে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম। ডা. কুমার প্রভাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ হাজার ক্যানসার রোগীর ৩০ শতাংশই ফুসফুস ক্যানসারের রোগী, অন্যদিকে ভারতে প্রতি ১ হাজার ক্যানসার রোগীর মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৬ জন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading