সারাদেশ

সাপ আতঙ্কে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

সাপ আতঙ্কে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা। কখনো সাপ লোকালয়ে উঠে আসছে, আবার কখনো জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। এমন অবস্থায় সাপ আতঙ্কে দিন কাটছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার নদীগর্ভের ইউনিয়ন চকরাজাপুরে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী চর, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকরাজাপুর চর। এ ছাড়া আংশিক টিকে আছে বাকি চরগুলো। এই চরের বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ সাপ আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন। তবে সাপের উপদ্রবে চর ছেড়েছেন এমন কারও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ চররাজাপুর খেয়াঘাটে গত সোমবার (৮ জুলাই) দুপরে চায়না দুয়ারি জালে ধরা পড়ে রাসেলস ভাইপার সাপ। পরে স্থানীয়রা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এ ছাড়া গত কয়েক দিন আগে চররাজাপুরের পূর্ব কালিদাষখালীর বাসিন্দা ফুলজান বেগমের (৫৫) শোয়ার ঘর থেকে একটি সাপ মারে স্থানীয়রা। তবে সাপটির নাম শনাক্ত করতে পারেননি স্থানীয়রা। এর আগে ২১ জুন পদ্মা নদীর চরআফড়া এলাকায় বাদামখেতে মধু বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তিকে রাসেলস ভাইপারের কামড় দেয়।

সাপের কামড়, লোকালয়ে সাপ উঠে আসা, বিভিন্ন সময়ে জেলেদের জালে সাপ ধরা পড়া নিয়ে সাপ আতঙ্ক ছড়িয়েছে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে। এমন অবস্থায় অনেকেই ছাড়ছেন চর। বিকল্প হিসেবে অনেকেই বাঘা সদর, পাবনার ঈশ্বরদী, খাজানগর, মানিকের চরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি- এখনো সেভাবে সাপ চোখে পড়ছে না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণায় মানুষ বেশি আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছাড়ছেন। পদ্মা নদীর পানি আরও বাড়লে চরের বিভিন্ন উঁচু স্থানগুলো পানিতে তলিয়ে গেলে তখন বেশি সাপ দেখা যাবে।

কয়েক দিন আগে কালিদাষখালীর বাসিন্দা ফুলজান বেগমের বাড়িতে সাপ মারা হয়। এ নিয়ে ফুলজান বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় নদী থেকে সাপ উঠে আসে। কয়েক দিন আগে এই চরে মধু বিশ্বাস নামের এক কৃষককে কামড় দেয় বাঘার চরআফড়া এলাকায়। এ ছাড়া প্রতিবছর তাদের এই চরে সাপের কামড়ে কেউ না কেউ মারা যায়। এই এলাকার আলম বিশ্বাসকে গত বছর সাপে কামড় দেয়। তারপর থেকে আলম এখনো সুস্থ হতে পারেনি। তার বাম হাতের একটা আঙুল পচে গেছে।

একই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকজনের বাড়িতে সাপ উঠেছিল। এদের মধ্যে ফুলজান বেগমের বাড়ির সাপ স্থানীয়রা মেরেছে। এ ছাড়া আজ দুপুরে জেলেদের জালে রাসেলস ভাইপার ধরা পড়েছে। পরে জেলেরা সাপটি পিটিয়ে মারে।

মিজানুর রহমানের দাবি, এখনো চরে সাপের উপদ্রব সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে নদীর ওপারে চরে বেশি সাপ দেখা যাচ্ছে। সেখানে সাপের আতঙ্ক বেশি। এই পূর্ব কালিদাষখালীসহ বিভিন্ন চরে নদীতে পানি বাড়লে সাপের উপদ্রব বাড়বে। কারণ পানির কারণে সাপের থাকার জায়গাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কোনো কোনো জায়গায় পানির স্রোতে ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাবে। তখন সাপ পানি থেকে লোকালয়ে উঠে আসবে।

কুষ্টিয়ার চিলমারি ইউনিয়নের চিলমারি গ্রামের জেলে শাহিনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, তাদের জাল পানির ২০ থেকে ২৫ হাত নিচে রাখা হয়। তাই জালে তেমন সাপ পড়ে না। তবে কোনো সময় নদীর বাঁধের ধারে অল্প পানিতে জাল পেতে রাখলে সাপ পড়ে। শুনলাম চায়না দুয়ারি জালে রাসেলস ভাইপার সাপ পড়েছে। পরে নাকি তারা মেরে ফেলেছে।

বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন শুরু হওয়ার পর সাপ আতঙ্ক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো সময় এলাকায় সাপও মারা পড়ছে। সাপে কামড় দেওয়ার পর সাপ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এই চরে। আমার জানামতে, সাপের আতঙ্কে এই চরের অনেকে বাঘা সদর, পাবনার ঈশ্বরদী, খাজানগর, মানিকের চরে আশ্রয় নিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে সাপ আতঙ্ক রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আতঙ্ক বেশি ছাড়ানো হয়েছে। সেই জায়গা থেকে মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। তবে উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাষিদের জানানো হচ্ছে তারা যেন কৃষিকাজের সময় গামবুট ব্যবহার করেন। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading