অর্থনীতি

বাজেট ঘাটতির অর্থ পুঁজিবাজার থেকে নেওয়ার আহ্বান

বাজেটের ঘাটতির অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

সোমবার (২৪ জুন) বিএমবিএর পক্ষ থে‌কে এ আহ্বান জানানো হ‌য়ে‌ছে।

বিএমবিএ জানায়, জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যে অর্থায়ন প্রয়োজন তা সংগ্রহে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাজেটের ঘাটতির অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান করে সংগঠন‌টি।

এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানায় মার্চেন্ট ব্যাংকগু‌লোর এ সংগঠন‌টি।

১. ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণের অধিকাংশ ব্যাংকিং উৎস হতে ধারস্বরূপ সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও অ-ব্যাংকিং উৎস হতে ধার করার মাধ্যমেও বাজেট ঘাটতি পূরণের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানের দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, পুঁজিবাজারের প্রাইমারি মার্কেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্ড/সুকুক/ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ইস্যুর মাধ্যমে বাজেটে অর্থায়নের উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে।

২. জাতীয় বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন পুঁজিবাজারের মাধ্যমে করতে হলে এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন ও পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিকরণে কাজ করে। উল্লেখ্য, এসব কাজের আওতা বৃদ্ধি পেলে কর আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে তাদের পরিচালন আয়ের ৩৭.৫ শতাংশ কর দিতে হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের কর দিতে হয় ২৭.৫ শতাংশ। এমতাবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য প্রযোজ্য করের হার ২৭.৫ শতাংশে আনা প্রয়োজন। এরূপ কর হ্রাস করা হলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের কার্যক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে যা মূলত বাড়তি কর সংগ্রহের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

৩. পুঁজিবাজারের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাইমারি মার্কেট। বিভিন্ন উদ্যোক্তা, এসএমই কোম্পানি, স্টার্ট-আপ কোম্পানি এবং অন্যান্য অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য প্রাইমারি মার্কেটকে অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজিকরণ, কমপ্লায়েন্স এবং আইনকানুন বিনিয়োগবান্ধব ও সহজিকরণ এবং উপদেষ্টা সহায়তা দেওয়ার মতো বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে বিদ্যমান কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ যা অতি স্বল্প বিধায় কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ কম। জাতীয় বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কর হারের ব্যবধান বৃদ্ধি করা হলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আকৃষ্ট হবে। এছাড়াও অ-তালিকাভুক্ত বা নতুন নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

৫. দেশের বৃহৎ ও স্বনামধন্য কোম্পানি, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পলিসি সহায়তার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ছাড় ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। এরূপ সুযোগ-সুবিধা বেশি সংখ্যক ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য পত্রকোষে বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বাজারের গভীরতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি তাদের স্টকগুলিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে।

৬. পুঁজিবাজার থেকে ৫০ লাখ টাকার ওপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কর ধার্যকরণের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে ৫০ লাখ টাকার উপর থেকে বিভিন্ন স্ল্যাব ভিত্তিক কর ধার্য করা যেতে পারে এবং এই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাইলান ট্যাক্স হিসেবে বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইলে বিবেচিত হবে। এছাড়াও পুঁজিবাজার থেকে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতকরণ এবং পরিবর্ধন করা যেতে পারে।

৭. পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করায় উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য কর প্রণোদনা, সহজীকৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং পলিসি সহায়তার মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৮. পুঁজিবাজারের উন্নয়নকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা দেওয়া আবশ্যক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা এবং সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবিকে প্রাইমারি মার্কেট সংক্রান্ত কার্যক্রম পুনরায় শুরু করাসহ বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা দেওয়া।

উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে ব‌লে জানায় বিএমবিএ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading