জেলার খবর

কচুরিপানা পরিষ্কারের পর ‘প্রাণ ফিরল’ কানুদা খালে

মাগুরার শালিখা উপজেলায় কানুদা খালের কচুরিপানা পরিষ্কার করার পর পানিপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে খালের পানি এখনো কালো রয়েছে। গত এক সপ্তাহে খালের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, বর্ষাকাল আসছে। বৃষ্টির পর খালের পানি আরও পরিষ্কার হবে।

এর আগে ৭ জুন উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবক ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের কার্যক্রমটি শুরু হয়। অবশ্য পুরো কাজটি স্বেচ্ছাশ্রমে শেষ হয়নি। পরে পেশাদার শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা সদরের আড়পাড়া বাজারসংলগ্ন কানুদার খালে স্বচ্ছ পানি। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে খালের কচুরিপানা দুই পাড়ে তুলে রাখা হয়েছে। তবে কচুরিপানা পরিষ্কার হলেও খালের পানি এখনো কালো রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন কচুরিপানায় ঢাকা থেকে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে খালের এই কালচে রঙের পানিতেও কয়েকটি শিশুকে সাঁতার কেটে গোসল করতে দেখা গেল।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার আড়পাড়া ও তিলখড়ি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কানুদা খালটি ফটকি নদে পতিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ২২টি খালের পানি এই কানুদা খাল দিয়ে নেমে নদে যায়। ২০১৯ সালে খালটি পুনঃখনন করা হয়। তবে কয়েক বছরের মধ্যে এটি কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে এর পানিও নষ্ট হয়ে যায়।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, খালটি পরিষ্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর দুই পাড়কে কেন্দ্র করে একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা। এরই অংশ হিসেবে খালের পাড়ে গত এক সপ্তাহে কৃষ্ণচূড়াসহ নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। খালের পাড়ে একটি অংশে তৈরি করা হচ্ছে মুক্ত মঞ্চ ও বনভোজনের জায়গা।

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খালের দুই পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৩০ একর জায়গা রয়েছে। যার একটি অংশ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করছিল। খাল পাড়ে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলতে তাঁদের খালের আরও গভীরের দিকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। বসতবাড়ি সরানো নিয়ে স্থানীয় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তবুও তাঁরা বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন এই আশায় যে খালের পাড়ে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠলে তাঁদের অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে জানা গেছে, খালের দুই পাড়ে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নানা রকম প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে খালটি যাতে আবারও কচুরিপানায় ভরে না যায়, এ জন্য স্থানীয় মৎস্যজীবী ও উদ্যোক্তাদের যুক্ত করে নানা রকম কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও হরেকৃষ্ণ অধিকারী গতকাল বলেন, খালের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজটা সহজ ছিল না। তবে এই কাজে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, আনসার সদস্য, গ্রাম পুলিশ, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ নানা পেশার মানুষকে যুক্ত করা গেছে। এ কারণে কাজটি সহজ হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি এক সপ্তাহে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করেছেন। তবে পরিচর্যা করা না হলে আগামী কয়েক বছরে হয়তো খালের অবস্থা আবারও আগের মতো হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে খালটি পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মাছ চাষ ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নৌকা ও প্যাডেল বোট নামানোর অনুমতি দেওয়া হবে। যাতে স্থানীয় লোকজন নিজেদের প্রয়োজনেই খালটি পরিষ্কার রাখেন।

ইউএনও হরেকৃষ্ণ অধিকারী আরও বলেন, খালের দুই পাড়ে একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠলে উপজেলার বাসিন্দাদের ঘোরার জন্য ভালো একটি জায়গা তৈরি হবে। প্রতিবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী আশপাশের জেলায় বনভোজনে যায়। এটা তাদের জন্য একটা ভালো বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এ উদ্দেশ্যে এখানে একটি মুক্ত মঞ্চ, শৌচাগার, রান্নার জায়গা ও একটি কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading