সারাদেশ

পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়, রশিদে লেখা হচ্ছে না টাকার পরিমাণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার হাটগুলোতে কোরবানির পশু বেচাকেনায় অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে হাটপ্রতি অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইজারাদাররা।

সরেজমিনে শিবগঞ্জ উপজেলার তর্ত্তিপুর, শ্যামপুর চামা, আড়গাড়া ও চককীর্তি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, রশিদে ক্রেতার নাম, ঠিকানা এবং কত টাকায় পশুটি কেনা হলো সেটি উল্লেখ করা আছে। তবে হাটে খাজনা বাবদ কত টাকা নেওয়া হলো সেটি উল্লেখ থাকছে না। কিন্তু ইজারাদাররা গরুর ক্ষেত্রে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির ক্ষেত্রে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আদায় করছেন। এছাড়া বিক্রেতার কাছে আরও অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

তবে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গরু, মহিষ ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে সব্বোর্চ ২৫০ টাকা খাজনা আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে।

শ্যামপুর চামা পশুর হাট থেকে ১১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে একটি কোরবানির খাসি কিনেছেন সেলিম। তিনি জানান, তার কাছে পশুর ছাড় বাবদ ৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে তার হাতে থাকা ছাড়ের রশিদে খাজনার টাকা উল্লেখ নেই।

আড়গড়া হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা এনামুল বলেন, তারা (ইজারদাররা) যেটা চাচ্ছে সেটাই দিতে হচ্ছে। এখানে জনগণের কিছু করার নেই। প্রতিবাদ করলে মারধরের শিকার হতে হবে।

আমিরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ছাড় বাবদ ৩৫০ টাকা চেয়েছিল। পরে আমি ৩০০ টাকা দিই। ছাড়ের রশিদে খাজনার পরিমাণ লেখা না দেখে, পুনরায় খাজনার পরিমাণ লিখতে বলি। তখন খাজনা আদায়ে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বলেন- এটা (খাজনার পরিমাণ) রশিদে উল্লেখ করতে হবে না। আমার কাছে মনে হচ্ছে অবশ্যই খাজনার পরিমাণ লেখা উচিত। পাকাপোক্ত একটা কাগজ দেওয়া দরকার, যাতে পরে কোনো ঝামেলায় না পড়ি।

শিবগঞ্জ উপজেলার বৃহত্তর তত্তিপুর কোরবানির হাটে তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলেন ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, তার দুটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রিত দুটি গরুর খাজনা বাবদ তার কাছে ১০০ টাকা নিয়েছেন ইজারাদাররা।

আব্দুস সামাদ বলেন, চককীর্ত্তি পশুর হাট থেকে ৭ হাজার ৯০০ টাকায় একটি কোরবানির ছাগল কিনলাম। খাজনা বাবদ ৩০০ টাকা দিয়েছি। রশিদে খাজনার পরিমাণ লেখা নেই কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা লিখে না দিলে কী করব?

তর্ত্তিপুর, শ্যামপুর চামা, আড়গাড়া ও চককীর্তি পশুর হাটের খাজনা আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জানান, শিবগঞ্জসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রশিদে কেউ খাজনার টাকা উল্লেখ করে না। সরকারিভাবে কত টাকা খাজনা তারা সেটিও জানেন না। ইজারাদাররা যে পরিমাণ খাজনা আদায় করতে বলেছেন সেটি তারা আদায় করছেন।

হাটের ইজারাদার শ্রী প্রবোধ দত্ত বলেন, করোনার সময় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। সে সময় সরকার হাটগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল এবং আমাদের এভারেজ হিসেব করে ক্ষতি বাবদ ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্ত আবেদন করার পরও আমরা সেই ক্ষতিপূরণ বাবদ ভর্তুকির টাকা পাইনি। সে কারণে ডিসি স্যারের কাছে হাটের ইজারা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন তিনি কমিটি করে হাটের ইজারা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন, কিন্ত সেটা এখনো বাস্তবিত হয়নি। তিনি লিখিত অনুমতি না দিলেও সে সময় মৌখিকভাবে ৬০০ টাকা করে খাজনা তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। সে বছর থেকে ৬০০ টাকা করে তুলছিলাম। তবে এই বছর গরুর খাজনা ৭০০ টাকা করে নিচ্ছি। এছাড়া সোনাইচন্ডি হাটে গরুর খাজনা ৮০০ টাকা এবং চৌডোলা হাটে ৯০০ টাকা খাজনা তোলা হচ্ছে। তাদের তুলনায় আমরা কমই খাজনা নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর হাটের দাম সাড়ে ৬ শতাংশ করে বাড়ে এবং তার সাথে আরও ২৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হয়। কিন্ত খাজনার রেট বাড়ে না।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. উজ্জল হোসেন বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত খাজনা আদায় করার এখতিয়ার কারও নেই। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও পশুর হাটগুলো মনিটরিং জোরদার করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading