পাবনায় ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স ও আয়া দিয়ে সন্তান প্রসব করার সময় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রসূতি মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (৮ জুন) ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত্যুর ঘটনায় প্রসূতির স্বামী সাইদুর রহমান বাদী হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ হাসপাতালের চিকিৎসক নাফিসা কবিরের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঘটনার পরপরই ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া জমজম হাসপাতালটি পরিদর্শন ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিন সদস্যের কমিটির প্রধান হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালট্যান্ট।
প্রসূতি ওই নারীর নাম জিমু খাতুন (১৯)। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার মাঝগ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমানের স্ত্রী। ডেলিভারি জন্য তিনি জমজম হাসপাতালের অংশীদার চিকিৎসক নাফিসা কবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, প্রসবকালীন কর্তব্যরত চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে ডিউটিরত আয়া সাথী খাতুন ও নার্স সালমাকে দিয়ে ডেলিভারি করানোর কারণে নবজাতকের মৃত হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন তারা।
প্রসূতির স্বামী সাইদুর রহমান জানান, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পরপরই স্ত্রী জিমু খাতুনকে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর জিমু খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাফিসা কবির স্বাভাবিক ডেলিভারি করানোর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে বাড়ি চলে যান। রাত পৌনে ৩টার দিকে প্রচণ্ড ব্যথা উঠে। কিন্তু জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালের চিকিৎসক না থাকায় সেখানকার আয়া সাথী খাতুন ও নার্স সালমা এসে প্রসূতির ডেলিভারির দায়িত্ব নেন।
তবে ডেলিভারির পরপরই নবজাতক মারা যায়। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকে। প্রতিবাদ জানালে হাসপাতালে লোকজন মারমুখী আচরণ করে।
রোগীর ভাবি মৌসুমি খাতুন বলেন, ডেলিভারির পরপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আমি ভেতরে গিয়ে নবজাতককে মৃত পেলেও তারা প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করে। আমরা চিকিৎসকের সহযোগিতা চাইলে হাসপাতালের লোকজন আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে রাত ৪টার দিকে চিকিৎসক নাফিসা এসে হুমকি-ধামকি দেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মালেকুল আফতাব ভুঁইয়া বলেন, ঘটনা জানার পরপরই জমজম স্পেশালাইজড হসপিটাল পরিদর্শন করা হয়। ঘটনা তদন্তে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালট্যান্ট শামীমা আক্তার বানুকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় প্রসূতির স্বামী অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়নাতদন্তের জন্য নবজাতকের মরদেহ পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চিকিৎসক নাফিসা ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ধরেননি।
হাসপাতালের রিসিপশনিস্ট ইমানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চলতি বছরের ১০ মার্চ এই হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় আরেক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনাতেও চিকিৎসক নাফিসা কবির বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে আবারও এই হাসপাতালে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের গেটের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে শনিবার সকাল ৯টার দিকে প্রসূতি নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।