সারাদেশ

‘শ্যামাসুন্দরীর কান্না’ শোনার দাবি

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রিভারাইন পিপল ক্লাব এবং গ্রিন ইকো ‘শ্যামাসুন্দরীর কান্না’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেছে। হাতে হাতে আর্ট পেপারে প্রতিবাদী কথা লিখে বুধবার (৫ জুন) দুপুর ১টায় রংপুর নগরীর আদালত সংলগ্ন শ্যামাসুন্দরীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

এরপর পদযাত্রা করে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেয়ালে ‘শ্যামাসুন্দরীর কান্না’ লেখা পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, লেখক-গবেষক মোস্তফা তোফায়েল, সংস্কৃতি কর্মী সফুরা খাতুন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভারাইন পিপল ক্লাবের আহ্বায়ক ছাওমুন পাটোয়ারি সুপ্ত।

বক্তাগণ শ্যামাসুন্দরীর কান্না শোনার দাবি জানান। ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নদী রক্ষকরা শ্যামাসুন্দরীর কান্না দেখেও না দেখার ভান করে। তাদের সামনে শ্যামাসুন্দরী দখল হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে। মাত্র চার কোটি টাকা হলে তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরীর দখল উচ্ছেদপূর্বক এর দূষণ দূর করা সম্ভব। প্রথমে চাই নদীর সুরক্ষা তারপর এর সৌন্দর্যবর্ধন।

মোস্তফা তোফায়েল হোসেন বলেন, শ্যামাসুন্দরীর পাশে এত অসহ্য দুর্গন্ধ যে এর পাশে মানুষ বাস করতে পারছে না। এসেবর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন। সফুরা খাতুন বলেন- ‘ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা শ্যামাসুন্দরীকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

ছাওমুন পাটোয়ারী সুপ্ত বলেন, অযত্নে শ্যামাসুন্দরী মরছে। উৎসমুখ বন্ধ করে শ্যামাসুন্দরীকে বাঁচানো যাবে না।

রংপুর সিটি করপোরেশন ও বিভাগ হওয়ার পর থেকে নগরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে। শ্যামাসুন্দরী খাল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ও আবাসিক ভবন। এসবের প্রতিদিনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শ্যামাসুন্দরী খালে। এতে খাল ভরাট হয়ে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানির প্রবাহ না থাকায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে খালপাড়ে। এ ছাড়া অনেকে পয়োনিষ্কাশনের সংযোগ এ খালে দেওয়ায় পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় শ্যামাসুন্দরী খালটি নাব্যতা হারিয়েছে। এর দুই পাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালটি।

রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী বলেন, ঘাঘটের উৎসমুখ তিস্তা নদী থেকে শ্যামাসুন্দরীকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে শ্যামাসুন্দরী স্রোত হারিয়েছে। নদীটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা এখন জরুরি। এজন্য শ্যামাসুন্দরী বাঁচাতে ঘাঘটের উৎসমুখ খুলে দেওয়া, শ্যামাসুন্দরী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা, দূষণ বন্ধ করা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করার দাবি জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, জলাবদ্ধতা দূর ও ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রংপুরকে মুক্ত রাখতে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তার মা চৌধুরানী শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে খালটি পুনঃখনন করেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের সম্মুখে রয়েছে নগরীর কেলাবন্দের ঘাঘট নদ।

সেখান থেকে শুরু করে নগরীর ধাপ পাশারীপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা শাপলা সেতু, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এলাকাভেদে এর প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট ছিল। বর্তমানে শ্যামাসুন্দরী দখল-দূষেণের কারণে মৃতপ্রায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading