খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি, যা জানা প্রয়োজন

প্রথমবারের মতো মার্কিন মুলুকে বসছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তাদের সঙ্গে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক ফরম্যাটটিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজও। আগামী ২ জুন ডালাসে উদ্বোধন হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের। প্রথমবারের মতো ২০ দলের অংশগ্রহণে হবে মেগা ইভেন্টটি। রিজার্ভ ডে থাকছে প্রথম সেমিফাইনাল ও ফাইনালে। ‍টুর্নামেন্টটি নিয়ে খুঁটিনাটি সব তথ্য জানুন এই প্রতিবেদনে।

আয়োজক দেশ দুটির টাইম জোনের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের সময়ের বেশ বড় পার্থক্য রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১ জুন বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও, বাংলাদেশে সেটি হয়ে যাচ্ছে ২ জুন। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ১১ ঘণ্টার ব্যবধান। একইভাবে ক্যারিবীয় দ্বীপের সঙ্গেও ১০ ঘণ্টার ব্যবধান রয়েছে। ফলে বিশ্বকাপের কিছু কিছু ম্যাচ বাংলাদেশ সময় রাত এমনকি মধ্যরাতেও অনুষ্ঠিত হতে দেখা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হওয়ার কথা ৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ম্যাচটি দেখা যাবে পরদিন (৮ জুন) সকাল সাড়ে ৬টায়। একইভাবে ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা হলে, সেদিন সকাল সাড়ে ৬টায় হবে বাংলাদেশ-নেপালের ম্যাচ। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ অব ডেথখ্যাত ‘ডি’-তে পড়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল।

এ ছাড়া দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত পাকিস্তান পড়েছে একই গ্রুপ ‘এ’। গ্রুপটিতে তাদের বাকি তিন সঙ্গী আয়ারল্যান্ড, স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। ‘বি’ গ্রুপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড ও ওমান খেলবে। আর ‘সি’ গ্রুপে আছে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনি। সবমিলিয়ে ৯টি (যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি এবং উইন্ডিজ মাটিতে ছয়টি) ভেন্যুতে হবে এবারের বিশ্বকাপ আসর। ২৯ দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে আগামী ২৯ জুন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে।

খেলা হবে যে ফরম্যাটে:

এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ২০টি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে প্রথমে হবে গ্রুপপর্বের খেলা। প্রতি গ্রুপে ৫টি করে দল থাকছে। গ্রুপপর্বে প্রত্যেক দল খেলবে ৪টি করে ম্যাচ। সেখান থেকে গ্রুপের শীর্ষ দুই দল যাবে সুপার এইট পর্বে। এই পর্ব থেকে বিশ্বকাপ পুরোপুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হবে। সুপার এইটেও চারটি করে দল নিয়ে দু’টো আলাদা গ্রুপ করা হবে।

এক্ষেত্রে র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে আইসিসি আটটি দলকে (ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা) আগেই বাছাই করেছে, যাতে টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা ও সূচি নির্ধারণে সুবিধা হয়। এই দলগুলোই যদি সুপার এইটে যায় তাহলে তারা সেই বাছাইয়ের ভিত্তিতে গ্রুপ এক অথবা গ্রুপ দুইয়ে যাবে। এক্ষেত্রে গ্রুপপর্বে টেবিলের শীর্ষে থাকা অথবা দুইয়ে থাকা কোনো ভূমিকা রাখবে না। তবে সুপার এইটে যে দুটি গ্রুপের শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে যাবে, সেখানে গ্রুপ রানারআপ মুখোমুখি হবে অন্য গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের।

পুরো টুর্নামেন্টে ম্যাচ জয়ের জন্য থাকছে ২ পয়েন্ট করে, ফলাফল না হলে ১ পয়েন্ট এবং হেরে গেলে কোনো পয়েন্ট যোগ হবে না। টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ টাইয়ের কোনো সুযোগ নেই, এরকম হলে সুপার ওভারে নিষ্পত্তি হবে ম্যাচ। সুপার ওভারেও ড্র হলে, খেলার ফল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সুপার ওভার চলবে।

রিজার্ভ ডে’র নিয়ম:

এবারের বিশ্বকাপে প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, শুধুমাত্র প্রথম সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য একদিন করে রিজার্ভ ডে বরাদ্দ আছে। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনালের (২৭ জুন) জন্য অতিরিক্ত ২৫০ মিনিট রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও যদি রিজার্ভ ডে রাখা হতো, তাহলে সেটি গড়াবে ২৮ জুন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। রিজার্ভ ডে-তে গড়ালে এই ম্যাচে যে দল জিতবে, তাদের ২৯ তারিখ ব্রিজটাউনে পৌঁছেই ফাইনালে মাঠে নেমে পড়তে হবে। কিন্তু আইসিসি চাচ্ছে ২৮ জুন ট্রাভেল ডে হিসেবে চিহ্নিত হোক এবং ২৯ জুন ফাইনাল আয়োজিত হোক।

এ ছাড়া যদি ভারত সেমিফাইনালে যায় তাহলে সুপার এইটের ফলাফল যাই হোক না কেন পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলবে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী ম্যাচটি হবে রাত ৮টায়। দেশটির অতিরিক্ত দর্শকের কাছ থেকে পাওয়া ভিউয়ারশিপের কথা মাথায় রেখে ভারত দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলবে। আবার বৃষ্টির জন্য বাড়তি সময়ের মধ্যেও যদি দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করা না যায়, তাহলে সুপার এইটে যে দল পয়েন্ট তালিকায় ওপরে থাকবে, তারা ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করবে।

বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ শেষ হতে হবে ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিটের মধ্যে, একেকটা ইনিংস শেষ করার সময় ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, এর সঙ্গে ইনিংস বিরতি থাকবে ২০ মিনিট। ম্যাচে বরাবরের মতোই মুখোমুখি হওয়া দুই দল দুটি করে রিভিউ পাবে।

এদিকে, এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে থাকছে “স্টপ ক্লক”, মানে একটা ওভার শেষ হওয়ার পরের ১ মিনিটের মধ্যে ২য় ওভার শুরু করার জন্য বোলার প্রস্তুত থাকবে। যেমনটা ব্যাটারদের ক্ষেত্রে থাকে, এক ব্যাটার আউট হওয়ার পরবর্তী দুই মিনিটের মধ্যে তাদের ক্রিজে এসে বল মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।

অন্যদিকে, বৃষ্টির কারণে খেলায় বিঘ্ন সৃষ্টি হলে ফলাফলের জন্য প্রতিটি দলকে ন্যূনতম অন্তত ৫ ওভার করে খেলতে হবে। তবে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য সেটি হবে ১০ ওভার। রিজার্ভ ডে নেই এমন ম্যাচে নির্ধারিত ৫ ওভারের খেলা আবহাওয়ার জন্য আর শুরু করা না গেলে ডিএলএস পদ্ধতিতে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হবে।

বিশ্বকাপের ভেন্যু ও ধারণক্ষমতা:

বিশ্বকাপের সর্বমোট ৫৫ ম্যাচের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হবে ১৬টি। ম্যাচগুলো তিনটি শহরের ভেন্যুতে। সেগুলো হচ্ছে— ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক ও ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম (৪০ হাজার ধারণক্ষমতা), নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম (৩৪ হাজার ধারণক্ষমতা) ও টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা) হবে ম্যাচগুলো।

বাকি ম্যাচগুলো হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টি ভেন্যুতে। ক্যারিবীয়ান দ্বীপের ভেন্যুগুলো হচ্ছে— অ্যান্টিগা ও বারবুডার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়াম (১০ হাজার ধারণক্ষমতা), বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভাল (২৮ হাজার ধারণক্ষমতা), গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম (২০ হাজার ধারণক্ষমতা), সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা), সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডাইন্সের অ্যারন্স ভেল প্লেয়িং ফিল্ড (১৮ হাজার ধারণক্ষমতা), ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি (১৫ হাজার ধারণক্ষমতা)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading