জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোই দায়ী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কার্বন নিঃসরণের জন্য মূলত উন্নত দেশগুলোই দায়ী। তাই বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষায় তাদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
বুধবার (২২ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে শক্তি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত পলিসি ফ্রেমওয়ার্কস ফর এনাব্লিং রিনিউয়েবল এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট : অ্যা গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল পারস্পেক্টিভ শীর্ষক নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ক দুই দিনব্যাপী ২৪তম জাতীয় রিনিউয়েবল এনার্জি সম্মেলন ও গ্রিন এক্সপোতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এতে সভাপতিত্ব করেন। গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই সম্মেলন শুরু হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি অন্যমতে ১.৩৬ ডিগ্রি বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে গড়ে ৯-১০ ইঞ্চিরও বেশি। সাইবেরিয়ার বরফ গলছে। পাকিস্তানের মত দেশেও বন্যা হচ্ছে নিয়মিতভাবে, যা কখনও কল্পনা করা হয়নি। দেশেও বন্যা হলে ২০ ভাগ স্থলভাগ পানির নিচে চলে যাচ্ছে। ১০ বছর পরপর বড় বন্যায় দেশের ৫০ ভাগ স্থলভাগ পানির নিচে চলে যাচ্ছে। লবণাক্ততার জন্য হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় জোয়ারের পানি আসছে। যা আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে মানুষের চিন্তার বাইরে ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তরাঞ্চলে খরা বেড়েছে। যার ফলে ফসলের প্রোডাক্টিভিটি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আরেকটি মারাত্মক প্রভাব হলো, হিমালয়ের বরফ গলে অনেকগুলো লেকের সৃষ্টি হয়েছে যা আগে ছিল না। কোনও কারণে ভূমিকম্পে সেগুলো ব্লাস্ট হলে সেই পানির স্রোতে দেশের উপর দিয়ে কি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে তা বলার বাইরে।
২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট শক্তির ৪০ শতাংশ গ্রিন সোর্স থেকে উৎপাদিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে। তাছাড়া তারা শক্তির প্রায় পুরোটাই রিনিউয়েবল এনার্জি থেকে উৎপাদন করছে। জার্মানির মতো দেশ তাদের শক্তির ৬০ শতাংশ গ্রিন সোর্স থেকে উৎপাদন করছে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে গ্রিন সোর্স থেকে এনার্জি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য তিনি পেশাজীবী ও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইতিমধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি বেড়েছে। প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যেখানে সর্বোচ্চ হলো ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই তাপ বাড়ার ফলেই বিশ্ব বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে উঠছে। বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে খুব দ্রুত ২.২৪ সেন্টিগ্রেড বাড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে কমপক্ষে ৫ গুণ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলোর একটিও পূরণ করেনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়েও সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উপাচার্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশকে সব ধরনের দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, গ্রিন এনার্জি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। এসময় উপাচার্য তরুণ সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা চান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আক্তার হোসেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সিইও মো. আলমগীর মোরশেদ, বাংলাদেশ সোলার রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জি. মো. নুরুল আক্তার এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন।
গ্রিনটেক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও বিআইবিএমের ফ্যাকাল্টি মেম্বার খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম নাসিফ শামস্। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান।