যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে চাইলে যে ৬ নিয়ম মেনে চলবেন
জীবনে হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। তবে সমস্যা যত জটিলই হোক না কেন, সঠিকভাবে এগোলে সমাধানও মেলে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আপনার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। জেনে নিন, কীভাবে যেকোনো সমস্যার ভালো সমাধানকারী হয়ে ওঠা যায়—
১. সমস্যাকে ভালোভাবে বোঝা:
যেকোনো সমস্যা সমাধানের সময় সবার আগে জানতে হবে, আপনি কী সমাধান করবেন। অর্থাৎ পুরো সমস্যা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে লক্ষণ ও কারণগুলো আলাদা করতে হবে। সমস্যাটা কী, তা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাটা কেন হচ্ছে, সেটাও বুঝে নিতে হবে। একটু সময় নিয়ে, ধৈর্য ধরে ভাবলে যেকোনো সমস্যার পেছনের নিয়ামকগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব। মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্যশীল হতেই হবে।
২. নেপথ্যের কারণগুলো নির্ণয় করা:
সমস্যাটা কী, তা ভালো করে জানার পর সেগুলো কেন হচ্ছে, সেটা জানতে হবে। সমস্যা সমাধান করতে গেলে আপনাকে এর নেপথ্যের কারণগুলোই শুধু খুঁজে বের করতে হবে, লক্ষণগুলো নয়। এ জন্য সময় নিয়ে সমস্যাটা তদন্ত করুন। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে অনুধাবন করুন।
৩. একাধিক সমাধান খোঁজা:
ভালোভাবে সমস্যা সমাধান করতে হলে আপনাকে উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে। এক কথায়, বাক্সের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু ভাবতে হবে। যেকোনো একটা সমাধান পেলে সেখানেই থেমে যাবেন না। চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। যতক্ষণ সম্ভব একাধিক বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করুন। একাধিক বিকল্প খুঁজে পেতে আবার ছকে বাঁধা চিন্তাভাবনা করলে হবে না। চিন্তাশীল সহকর্মী বা বন্ধুর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। মনকে উদার রাখুন। যেকোনো কিছু গ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। এভাবে আপনি উদ্ভূত সমস্যার একাধিক বিকল্প সমাধান খুঁজে পাবেন। বিকল্প যত সমাধানই খুঁজে পান না কেন, সেসব অনবরত বিশ্লেষণ করুন।
৪. সবচেয়ে কার্যকর সমাধানটি খুঁজে বের করুন:
একাধিক সমাধান থেকে সবচেয়ে কার্যকরটি খুঁজে বের করা মোটেও সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। অবশ্য যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে এর সমাধান পাবেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন—
• সমাধানটি কতটুকু কার্যকর হবে?
• এই সমাধানের ফলে কি পুরো প্রক্রিয়া বা ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটবে?
• সমাধানটি বাস্তবায়নের জন্য আপনার কি যথেষ্ট পুঁজি আছে?
• সমাধানটি বাস্তবায়নের পথে ঝুঁকি কী কী? ঝুঁকিগুলো কি মোকাবিলা করা সম্ভব?
• সমাধানটা কি সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ মানুষের জন্য উপকার বয়ে আনবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখুন। উত্তরগুলো যে সমাধানটিকে বেশি সমর্থন করবে, সেটিই বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করে ফেলুন।
৫. সমাধানের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন:
এখানে আপনাকে অনেক কিছু ভাবতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনাটি হতে হবে একদম নিখুঁত। চোখ-কান খোলা রেখে নির্ধারণ করুন, কে, কীভাবে, কখন সমাধানটি বাস্তবায়ন করবে। এরপর ভাবুন, সমাধানটি সফল হলো কি না, তা কীভাবে বুঝবেন।
৬. সমাধানটি সফল হলো কি না, তা অনুধাবন করুন:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যেকোনো সমস্যার সমাধান করেই দাঁড়ি টেনে দিই। সমস্যার সমাধান তো হলো। কিন্তু সেই সমাধান আদৌ সফল হলো কি না, তা ভেবে দেখি না। অথচ পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কোনো সমাধান সফল হয়েছে কি না, তা বুঝতে যেসব বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেন—
• লক্ষ্যগুলো পূরণ হলো কি না?
• নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই সব সম্পন্ন হলো কি?
• কাজটা সম্পূর্ণভাবে শেষ হলো কি?
• দৃশ্যমান কোনো ফলাফল পাওয়া গেল কি?
ভেবে দেখলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল খুঁজে পাওয়া যায়। আপাতদৃষ্টে কার্যকর মনে হওয়া সমাধানটিও দিন শেষে ব্যর্থ হতে পারে। তবে এমন হলে হাল ছাড়বেন না। সমাধান হিসেবে বেছে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যাচাই করে সংস্কার করুন। দরকার হলে নতুন করে শুরু করুন।
শেষ কথা:
ভুল থেকে শিখুন। মনে রাখবেন, সমস্যা যখন তৈরি হয়েছে, তার সমাধানও তৈরি হয়েই আছে। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষামাত্র। সমাধান করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও হতাশ হবেন না। মনে রাখুন, ‘একবারে না পারিলে দেখো শতবার।’