এনবিআরের ১৩ ঘণ্টার অভিযান, উদ্ধার হয়নি কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা
প্রায় ১৩ ঘণ্টার বিরতিহীন অভিযানেও কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায় করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ দল।
এনবিআরের চেয়ারম্যানের লিখিত অনুমোদনপত্র নিয়ে কর অঞ্চল-১৫ এর দুইজন ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের টিম মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত সরকারের পাওনা টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান-১ শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু আদালতে চলমান মামলার অজুহাত তুলে শেষ পর্যন্ত টাকা ছাড় করেনি ব্যাংকের গুলশান শাখা।
নাছোড়বান্দা এনবিআর কর্মকর্তা লিখিত ব্যাখ্যা নিয়েই গুলশান শাখা ত্যাগ করেন। যদিও এনবিআর কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই দাবি করেছে মামলার বিষয় ও এনবিআরের পাওনা কর সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের পাওনা ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় বিশেষ টিম পাঠায় কর অঞ্চল-১৫। উল্কা গেমস লিমিটেড নামের একটি অনলাইন জুয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাকির অভিযোগে দুই বছর আগে তদন্ত শুরু করে এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি। টাকা নিয়ে কোম্পানিটি যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য উল্কা গেমসের ব্র্যাক ব্যাংকে থাকা ৫৩ কোটি টাকা ফ্রিজ করে সিআইসি। তদন্তে প্রায় ৫০ কোটি টাকা কর ফাঁকির প্রমাণ পায় সংস্থাটি।
তিনি আরও বলেন, এনবিআর লিগ্যাল প্রক্রিয়ায় সরকারের পাওনা আদায়ে একটি বিশেষ টিম অভিযানে যায়। কিন্তু ওই কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সমস্যা উল্কা গেমস ও ভারতীয় কোম্পানি মুনফ্রগের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। ওই অজুহাতে টাকা ছাড় করতে রাজি নয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এনবিআরের পাওনার সঙ্গে ওই মামলার কোনো যোগসাজশ নেই। করের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সে কারণে এনবিআর চেয়ারম্যানের লিখিত অনুমোদন নিয়েই রাজস্ব আদায় করতে গেছে বিশেষ টিম।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার রশীদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকে থাকা টাকা নিয়ে মামলা চলছে উল্কা গেমস ও ভারতীয় কোম্পানি মুনফ্রগের মধ্যে। মামলার জেরে এই টাকা লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। এনবিআর এই টাকা পাবে কি না, সে বিষয়ে শুনানি হবে আগামী ৫ মে। আদালতের সিদ্ধান্তের পরই টাকা ছাড় করা হবে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় উল্কা গেমস লিমিটেডের নামে থাকা হিসাব ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ফ্রিজ করা ছিল। সিআইসির কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেতে পারে। সে কারণে হিসাব সচল করে টাকা আদায়ে কর অঞ্চল ১৫ কে নির্দেশনা দেয় সিআইসি। আদেশ পেয়ে গুলশান শাখায় যান কর্মকর্তারা। তবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রায় ১৩ ঘণ্টা ব্যাংকে অবস্থান করেও টাকা ছাড়াই শাখা ত্যাগ করতে বাধ্য হন কর কর্মকর্তারা। টাকা না পেলেও লিখিত ব্যাখ্যা নিয়ে যায় কর অঞ্চল-১৫ এর কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে এনবিআর মনে করছে— ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে
কর অঞ্চল-১৫ এর ডেপুটি কমিশনার ফজলুল ইসলাম বরাবর দাখিল করা এক পত্রে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক হাসান মাহমুদ।
ব্যাখ্যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্র্যাক ব্যাংকের আইনি বিভাগ থেকে আমরা মতামত নিয়েছি। সেখানে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের ইস্যু করা কোম্পানির মামলার বিষয়টি বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় ব্র্যাক ব্যাংক তাদের কাছে রক্ষিত উল্কা গেমস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হয়েছে। আদেশ প্রাপ্তির পর ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি আরও একটি কোম্পানির পক্ষ থেকেও আবেদন পায়। আদালতের শুনানির পর ওই আবেদনটিও মঞ্জুর করা হয়েছে।
ব্যাংক আবেদন পর্যালোচনা করে তাদেরকে পুরো বিষয়টি অবগত করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে— ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর এনবিআর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) নির্দেশনায় হিসাবটি ফ্রিজ হিসাবে চিহ্নিত করা আছে। আগামী ৫ মে এ বিষয়ে আদালতের কোম্পানি কোর্ট নং ২৬ এর ১৩ নম্বর আইটেম হিসাবে শুনানি হবে। যেহেতু বিষয়টি এখনও বিচারাধীন এবং উল্লিখিত ইস্যুটি ৫ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিচারাধীন বিষয়টি নিয়ে আমরা পে-অর্ডার দিতে পারি না। এ জাতীয় অনুরোধ গ্রহণ করার অবস্থানে নেই, কারণ এটি আদালত অবমাননার দিকে নিয়ে যেতে পারে। আশা করছি আপনারা আমাদের অবস্থান বুঝতে পেরেছেন।