সারাদেশ

নানা সংকটে নড়াইলে ঘুরছে মৃৎশিল্পের চাকা

দেশে মৃৎশিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি ঘরেই মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, কলসি, থালা, বাটি, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, খাবার টেবিলসহ বিভিন্ন প্রকার সৌখিন সামগ্রীর ব্যবহার হতো। কুমারপাড়ায় ছিল কর্মব্যস্ততা। চারদিকে কাঁচাপোড়া মাটির গন্ধ ভেসে আসত। চাহিদা থাকায় গ্রামীণ হাটবাজারেও সয়লাব ছিল মাটির পণ্যের। সেসময় দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভূমিকা রেখেছে এই শিল্প।

তবে এখন তা অতীত হয়েছে। প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ নানান ধাতব পদার্থের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বাড়ছে। মৃৎশিল্পের দখল নিচ্ছে তারা। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে কুমারদের আয়। কারিগররা তাই পেশা বদলে যুক্ত হচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটিও এখন সহজলভ্য নয়। আগে বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও এখন চড়া মূল্যে কিনতে হয় সেই মাটি।

তবে এতসব প্রতিকূলতার মাঝে এখনও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন নড়াইলের পালেরা। জেলার চণ্ডীতলা, কুমারডাঙ্গা, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম, ছোট কালিয়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামে এখনো ঘুরছে কুমারদের চাকা। পাল পরিবারের প্রায় ১০ হাজারের অধিক নারী-পুরুষ যুক্ত আছেন এই শিল্পে। প্রায় পাঁচ শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে মাটির নানান পণ্য। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য যাচ্ছে যশোর, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সদর উপজেলার চণ্ডীতলার এলাকার তীর্থ পাল ও রবিন পালসহ কয়েকজন বলেন, আগে আমাদের এখানে ৪০-৫০ ঘর এই কাজ করত। এখন ১৫-২০ ঘর করে। প্রত্যেক এলাকায় এরকম কমে গেছে। দিনে ৫০ থেকে ৬০টি হাঁড়ি বানাতে পারলে মজুরি হয়ত পড়ে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। এনামেল, সিরামিক, প্লাস্টিক, স্টিলের কারণে আগের চেয়ে মাটির পণ্যের চাহিদা কম। যা আয় হয় তা দিয়ে চলে না, এজন্য কাজ করা পালের সংখ্যাও কমে গেছে। এছাড়া আগে মাটি কেনা লাগত না। এমনি পাওয়া যেত। এখন একেক ট্রাক মাটি কিনতে হয় ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দিয়ে।

নিরঞ্জন পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে আগের চেয়ে মাটির কাজ করা পালের সংখ্যা কমে গেছে। এই কাজ করে আমাদের পেট চলে না। এ কারণে অনেকেই কাজ বাদ দিয়ে দেচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। সরকার যদি সহজে লোন দিত তাহলে আমরা ব্যবসাটা বড় করতে পারতাম, আরও বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারতাম।

কালিপদ পাল বলেন, বাপ-ঠাকুরদা এই কাজ করত। আমরও ছোটবেলায় শিখেছি। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এ কাজ করতেছি। বয়স হয়ে গেছে, আগে বেশি কাজ করতে পারতাম, এখন অল্প করি। আর আমাদের ছেলেপেলেরা এ কাজ করতে চায় না। তারা অন্য কাজে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) নড়াইল জেলায় দায়িত্বরত উপব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নড়াইলে মৃৎশিল্পের কাজ যারা করে তাদের পণ্য জেলার বাইরেও অবস্থান করে নিয়েছে। তাদের এই পণ্যের আরও বেশি প্রসারে বিসিক কাজ করবে। পালদের প্রশিক্ষণ ও অর্থিক সহায়তাও দেবে বিসিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading