সারাদেশ

খাবারের বিনিময়ে গর্ভের সন্তানকে দত্তক দিতে চান মেম্বারের স্ত্রী!

স্বামী ভরণপোষণ না দেওয়ায় খাবার ও চিকিৎসার বিনিময়ে গর্ভের সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিতে চান অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম মঞ্জুরা বেগম। তিনি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিম মাদবরের তৃতীয় স্ত্রী।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্বামী রেজাউল করিম তার কোনো খোঁজখবর না নেওয়ায় একটি ভাড়া বাড়ির ছোট্ট রুমে অনাহারে, চিকিৎসাবিহীন জীবন কাটছে তার। অসহায় এই নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি গর্ভকালীন সময়ে খাবার, পোশাক ও চিকিৎসার বিনিময়ে তার গর্ভের সন্তানকে কোনো নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিতে চান।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট বাজারের ছাগলহাটা সড়কের পাশে মনিরের বেকারি সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে বসে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মঞ্জুরা বেগমের।

মঞ্জুরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মাগুরার পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত রহিম মন্ডলের মেয়ে। আমার নানা বাড়ি শরীয়তপুরে। মা জুলেখা বিবি মারা যাওয়ার পরে উত্তারাধিকার সূত্রে আমি নানা বাড়ি থেকে ১ একর ২ শতাংশ সম্পত্তি পাই। ওই সম্পত্তি হাতে পেতে আমার ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে। সার্টিফিকেট নিতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার রেজাউল করিমের কাছে যাই। এরপর তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মেম্বার তার আগের দুই স্ত্রী ও সন্তানদের কথা আমার কাছে গোপন করে। আমি অন্য জেলার মানুষ হওয়ায় বিষয়টি ভালোভাবে জানতেও পারিনি। মেম্বারের কথায় বিশ্বাস করেছি।

তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালে মেম্বার আমাকে বিয়ে করে। বেশ ভালোভাবেই আমাদের সংসার চলছিল। এর মধ্যে মেম্বার আমার জমানো সব টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। জায়গাজমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় কাগজপত্র ফিরে পেতে আমি আদালতে মামলা করি। এরই মাঝে আমি গর্ভবতী হই। এটা জানার পর থেকে মেম্বার আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ ও মারধর করতে শুরু করে। এমনকি মেম্বারের প্রথম ও দ্বিতীয় ঘরের স্ত্রী-সন্তানরা আমার ভাড়া বাসায় এসে আমাকে নির্যাতন করে। আমি এখন অসুস্থ। মেম্বার আমার ভরণপোষণ ও চিকিৎসার খরচ দেয় না। কোনো খোঁজখবরও রাখে না। আমি কারো সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে জানতে পেরে আমাকে বাসায় এসে মারধর করে চলে যায়। গত রমজানে শরীয়তপুরের এক ডাক্তারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ভিজিট ছাড়া চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু ওই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরে আর ওষুধ কিনতে পারিনি। মেম্বারকে বারবার বলা সত্ত্বেও সে আমাকে ওষুধ কিনে দেয় না, খাবার দেয় না। মামলার কারণে জমি থেকে কোনো আয়ও হয় না। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি ঘরের মধ্যে না খেয়ে পড়ে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আমিও মরব, আমার পেটের সন্তানও মারবে। যদি কোনো ব্যক্তি বা নিঃসন্তান দম্পতি আমার গর্ভকালীন ভরণপোষণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে তাহলে জন্মের পর আমি তাদের আমার সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেব।

ইউপি সদস্য রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ করেছেন কি না?-এমন প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জুরা বেগম বলেন, ভরণপোষণের দাবি নিয়ে আমি পরিষদে গিয়েছিলাম। মেম্বার রেজাউল করিম আমাকে চেয়ারম্যানের সামনেই মারধর করেছে। চেয়ারম্যানকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো বিচার করেননি। রেজাউল করিমের অত্যাচার সম্পর্কে আমি গত রমজানে এসপি স্যারকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। তিনি সব কিছু জানেন।

অভিযুক্ত রেজাউল করিম মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তাকে চাল কিনে দিলে সে চাল বিক্রি করে দেয়। এরপর আবার চাল চায়। গতকালকে তাকে আমি ৪০০ টাকা দিয়েছি স্যালাইন খাওয়ার জন্য। ভরণপোষণ ও চিকিৎসার বিনিময়ে যদি সে গর্ভের সন্তান অন্যকে দিয়ে দিতে চায়, তাহলে তো বোঝা যাচ্ছে সে এখানে ব্যবসা করতে এসেছে। আমার আরো দুইজন স্ত্রী আছে। আমি তাকে বলেছি, সে মাসে ১০ দিন সময় পাবে। কিন্তু সে কথা শোনে না। পরিষদে এসে সবার সামনে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। পরে আমি তাকে মারধর করেছি।

সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল জমাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব সদস্যদের নিয়ে পরিষদের সভা চলতেছিল। এমন সময় রেজাউল মেম্বারের স্ত্রী মঞ্জুরা এসে উল্টাপাল্টা আচরণ করতে শুরু করে। আমি ওই মহিলাকে বলেছিলাম বাড়িতে যাও। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আমার জানা মতে রেজাউল তার স্ত্রীকে ঠিকমত ভরণপোষণ দেয়। আর মঞ্জুরা যে গর্ভবতী সেই বিষয়টি আমি জানি না। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি আপনার কাছেই প্রথম জানতে পারলাম। মেম্বার যদি তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দেয়, তাহলে মেম্বারের সম্মানি থেকে বা বিকল্প উপায়ে তার অসুস্থ স্ত্রীকে সাহায্য করা যাবে। কিন্তু তার তো আমাদেরকে জানাতে হবে। উনি যদি নিজে বা কোনো মাধ্যমে আমাদেরকে বিষয়টি জানান তাহলে আমরা তাকে সাহায্য করব।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঞ্জুরা বেগমের জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলার বিষয়টি আমি জানতাম। কিন্তু সে যে গর্ভবতী ও চিকিৎসা পাচ্ছে না এই বিষয়টি জানতাম না। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading