জাতীয়

ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আব্দুল হাই আর নেই

শনিবার (১৬ মার্চ) ভোরে থাইল্যান্ডের বামরুনদগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি থাইল্যান্ডে অবস্থান করা তার ব্যক্তিগত সহকারী শহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ মেয়ে ২ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।


১৯৫২ সালের পহেলা মে শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ কনেন আব্দুল হাই। বাবা ফয়জুদ্দিন মোল্লা ও মা ছকিরন নেছা দম্পতির ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার শিক্ষাজীবন শুরু পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পাস করার পর ভর্তি হন বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাস করেন।

বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। বিপদে-আপদে ছুটে যান কর্মীদের পাশে। সেই থেকে তার জনপ্রিয়তা শুরু। ১৯৬৯ সালে সরকারি কেসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সেখানেও তিনি নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে তিনিই ঝিনাইদহে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঝিনাইদহ যুবলীগের আহ্বায়ক ও ১৯৭৩ সালে যুবলীগের মহকুমা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
 

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেই নির্বাচনে সারা দেশে মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য আসন ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এর শৈলকুপা আসন।

স্বাধীনতার টানা ৩০ বছর পর তিনি বিএনপির হাত থেকে শৈলকুপা আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগের দখলে নেন তিনি। ২০০১ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুল হাই। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মতো ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি।

আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। তার জানাজা ও দাফনের বিষয়টি পরিবার থেকে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading