হাসপাতালে জমে থাকা ময়লার স্তুপে আগুন, আতঙ্কে রোগী ও স্বজনেরা
ঝিনাইদহের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি যেন ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। ৭ তলা ও ৮ তলার বেলকনিতে ময়লার স্তুপ জমেছে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রয়ারি) শিশু ওয়ার্ডের পাশের বেলকনির সেই ময়লার স্তুপে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এসময় কেউ হতাহত হয়নি।
ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর স্টেশন অফিসার সুমন আলী খবর নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল বাহিনী পৌঁছানোর আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ময়লার স্তুপ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শনকালে জানা যায়, ৮ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটির ৯ম তলার নির্মাণকাজ ধীরে ধীরে চলছে। দুইটি লিফট দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। আগুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে (৫ ফেব্রুয়ারি) নিচ তলার সিড়িতেই সন্তান জন্ম দেন এক মা।
শুধু তাই নয় ৭তম ও ৮ম তলায় পাতলা টিনের চাল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তেরি করা হয়েছে। সেখানে ময়লা আর্বজনায় ঠাসা। দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন রোগীরা। স্বজনরা অভিযোগ করেছেন ফেলা রাখা ময়লার স্তুপ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। আরও অভিযোগ করা হয়েছে বহুতল এই ভবনের ময়লার স্তুপ অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিশাল ভবনটি যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৭তম তলার ২নং শিশু ওয়ার্ডের এফ নাম্বার কক্ষের পশ্চিম কোণের কক্ষের পাশের বেলকনিতে স্তুপ করে রাখা ময়লা আবর্জনায় (পলিথিন) হঠাৎ আগুন ধরে যায়। আশপাশে ধোয়া ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা হাসপাতাল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গর্ভবতী মায়েরাও ভয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামাতে থাকেন। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান তারা। ওই সময় অসুস্থ শিশু কোলে মায়ের কান্নায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তালে। ফায়ার সার্ভিস দল আসার পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। ভর্তি রোগীরা ফিরে যান নিজ নিজ ওয়ার্ডে।
৭৫ বছর বয়সী হাজারী চন্দ্র বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে জানান, গত এক সপ্তাহ হলো হাসপাতালে এসেছি। লিটন চালু না থাকায় ছেলেরা কোলে করে ৬ তলায় উঠিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সিনিয়র স্টাফ নার্স নিলুফা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, ৭তম তলার ২নং শিশু ওয়ার্ডের এফ নাম্বারের উল্টো (পূর্ব) দিকে কক্ষের নিউমনিয়া আক্রান্ত চার মাস বয়সের শৈলকুপা উপজেলার মলমলি গ্রামের খলিলের ছেলে হযরত আলীর মত্যু হয়। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনোয়ারুল ইসলামসহ সকলে ছুটে যান। এ সময় আগুন আগুন বলে হৈ চৈ শুরু হয়। শিশু কোলে তুলে মায়েরা নীচের দিকে ছুটতে থাকেন। পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করে যে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেনা তারা। প্রাণ ভয়ে রুগীরা ছুটা ছুটি শুরু করে দেয়। আগে থেকেই লিফট অচল থাকায়, ৭ তলা ও ৮ তলাসহ সব ফ্লোরের রোগী এবং স্বজনরা সিড়ি দিয়ে
নিচে নামতে থাকেন।
ওয়ার্ড বয় ফিরোজ আলী ও আয়া আছমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে জানান, দ্রুত ধোয়ার দিকে ছুটে যান তারা এবং অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চালু করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিছু সময় পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসে।
একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, আগুন দেখে সার্জিক্যাল, গাইনী, অর্থোপেডিক রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। লিফট দিয়ে নামতে না পেরে অনেক রোগীকে কাঁধে নিয়ে ছুটতে থাকেন স্বজনেরা। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঠিকাদারের ম্যানেজার মাহবুব ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, লিফট চালু হতে আরও অন্তত এক মাসের বেশি সময় লাগতে পারে।
হাসপাতাল সম্পর্কে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল করিমকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. আলাউদ্দিন জানান, খুলনা থেকে ডিডি ( উপ-পরিচালক স্বাস্থ্য) চুয়াডাঙ্গাতে এসেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সেখানে গেছেন। আগুনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিড়ি কিংবা সিগারেট আগুন থেকে (শিশু ওয়র্ডের একটি কক্ষের বাইরে) বেলকনিতে ফেলা আর্বজনাতে আগুন লাগে। ওই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
লিফট বন্ধ এবং আবর্জনার স্তুপের বিষয়ে তিনি বলেন, ৯ম তলার নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার টিনের চাল দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেছে। ময়লা-আর্বজনার এই স্তুপের জন্য রোগীর স্বজনরাই দায়ী। নির্মাণকাজের জন্য লিফট বন্ধ আছ।