সারাদেশ

নাফ নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় শত শত রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শীলখালী ও বলিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এসব এলাকার জীবনের ঝুঁকি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় মিয়ানমারের শত শত রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছেন। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাতে নজরদারি এড়িয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই।

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য নাফ নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থানের কয়েকটি ছবি হাতে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লম্ববিল, উনছিপ্রাংকানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যান। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়।

বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকবোঝাই ৪-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

টেকনাফ হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের খারাংখালীর বাসিন্দা রবিউল বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাংলাদেশ সীমার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। তারা কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারিনি। তারা মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর বাসিন্দা। কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর কারণে তারা এদিকে পালিয়ে আসছে।

হোয়াইক্ষ্যং লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা কায়সার বলেন, কাল আমাদের সীমান্ত দিয়ে দুইজন রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি আটক করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের লম্বাবিল এলাকার সীমান্ত দিয়ে খালি চোখে নাফ নদীতে রোহিঙ্গাবোঝাই ৩-৪টি ডিঙি নৌকা দেখা যায়।

হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করছে। দুই থেকে তিন দিনে ৬ জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। আরও কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করছে শুনেছি। এইজন্য আমার সব ইউপি সদস্যদের সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে।

উনছিপ্রাং ২২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি রফিক বলেন, এই মুহূর্তে কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধে চলছে। কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার আছে। এলাকাগুলোতে ব্যাপক হামলা হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিতে আছেন।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদীর শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আসা সন্দেহজনক দুই নারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজবির সদস্যরা ওই দুই নারীকে দেখতে পেয়ে থামার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে, ওই দুই নারী নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক পরিচয় দেন। পরে তাদের পুশব্যাক করা হয়। আমরা সব সময়ই সজাগ আছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from ঝিনেদা টিভি

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading